ত্রাতা: সেখ ইসরাইল।
তীব্র গতিতে ছুটে আসছে এক্সপ্রেস ট্রেন। রেল লাইন ধরে হনহন করে সে দিকেই হাঁটছেন বৃদ্ধা।
মঙ্গলবার সকালে পান্ডুয়ার জয়পুর রেলগেটের সামনে এই দৃশ্য দেখে কেউ চিৎকার করে মহিলাকে সাবধান করার চেষ্টা করছেন। কেউ চোখ বুজে ফেলেছেন। কিন্তু ট্রেনটি চলে যাওয়ার পরে সবাই দেখলেন, লাইনের পাশ থেকে অক্ষত অবস্থায় তিনি উঠে দাঁড়ালেন। পাশে এক যুবক। বিপদ বুঝে ওই যুবকই ছুটে গিয়ে বাঁচিয়েছেন বৃদ্ধার প্রাণ।
নিজের জীবন বাজি রেখে কার্যত সিনেমার কায়দায় এ হেন সাহসিকতায় হিরো বনে গিয়েছেন বছর বাইশের সেখ ইসরাইল। পান্ডুয়ার নীরদগড় গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক টোটো চালান। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ তিনি যাত্রী নিয়ে ক্ষীরকুণ্ডীর দিকে যাচ্ছিলেন। জয়পুরে রেলগেট পড়ায় দাঁড়িয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেই সময় হাওড়া থেকে দিল্লিগামী আপ উদ্যানআভা তুফান এক্সপ্রেস বর্ধমানের দিকে যাচ্ছিল। ইসরাইলের কথায়, ‘‘হঠাৎ দেখি, ওই ঠাকুমা লাইন ধরে খুব জোরে হাঁটছেন। লোকজন চিৎকার করলেও তিনি তাতে কান দিচ্ছেন না। আমি ছুটে গিয়ে তাঁকে ধাক্কা মেরে পাশে ফেলে দিই। আমিও তাঁর সঙ্গে লাইনের ধারে পড়ে যাই। ট্রেনটা খুব কাছে চলে এসেছিল। আমরা পড়ে যাওয়ার পরেই ট্রেনটা বেরিয়ে যায়।’’
নতুন জীবন পেয়ে পান্ডুয়ারই ইলছোবা-দাসপুর পঞ্চায়েতের অধীনে গজিনাদাসপুর গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব ওই মহিলা জানান, বছর দশেক আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। বড় ছেলের সংসারে থাকেন। কিন্তু ছেলে-পুত্রবধূ দেখভাল করেন না। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। ছোট ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। থাকা-খাওয়ার সংস্থান হারিয়ে তিনি আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে বৃদ্ধা জানান। সব শুনে ইসরাইল তাঁকে খাবার কিনে দেন। তার পরে পান্ডুয়া থানায় নিয়ে যান। বৃদ্ধা পুলিশকেও সব খুলে বলেন। তিনি অবশ্য ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করতে চাননি। পুলিশ তাঁর বড় ছেলে এবং বৌমাকে ডেকে পাঠায়। তাঁরা যাতে বৃদ্ধার দেখভাল করেন, সেই কথা বলা হয়। ছেলে-বৌমা থানা থেকে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান।
বৃদ্ধার কথায়, ‘‘জীবনের উপরে ঘেন্না ধরে গিয়েছিল। ছেলেটা নিজের জীবন বিপন্ন করে আমাকে বাঁচিয়ে দিল। ভগবান ওর মঙ্গল করবেন।’’ স্কুলের চৌকাঠে কোনও দিন পা না রাখা ইসরাইল বলেন, ‘‘ওই ঠাকুমাকে বাঁচানোর পরে থানায় যেতে ভয় লাগছিল। এর আগে কখনও থানায় যাইনি তো!’’
স্থানীয় মানুষজন ইসরাইলের সাহসিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পুলিশও তাঁকে বাহবা দিচ্ছে। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সাহসিকতার জন্য ওই যুবককে পুরস্কৃত করার কথা ভাবা হচ্ছে।’’