general-election-2019-vote-colour

মানুষের মন জিততে মুড়িমাখা খেয়েই চলছে প্রচার

রাজনীতির ময়দানেও তার কদর কম নয়। পথে-প্রচারে বেরিয়ে শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে রাজনৈতিক কর্মীরা মুড়িতেই ভরসা রাখছেন।

Advertisement

প্রকাশ পালও সুশান্ত সরকার

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০০:১১
Share:

মুড়ি খেয়ে পান্ডুয়ায় প্রচার বাম প্রার্থীর। ছবি: সুশান্ত সরকার

একটু একটু করে চড়ছে রোদ্দুরটা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। লাল রঙের পানামা হ্যাটটা মাথা থেকে খুলে চোখে মুখে জল ছিটিয়ে নিলেন সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহা। তার পরে সপার্ষদ গোল করে বসে পড়লেন মাটির দাওয়ায়। মাঝখানে খবরের কাগজ বিছিয়ে মুড়ি-চানাচুর ছড়িয়ে দিলেন গেরস্থ-গিন্নি। কাঁচালঙ্কা-পেঁয়াজ মেখে তা শেষ করতে করতেই পান্ডুয়ার বেড়ুইগ্রামের এলাকার সমস্যা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হল।

Advertisement

মুড়ির সঙ্গে বাঙালির সখ্যতা সর্বজনবিদিত। অনুসঙ্গ হিসেবে কখনও চপ-বেগুনি, কখনও আলুর দম বা তরকারি, আবার কখনও বাতাসা। সকালের জলখাবার থেকে সন্ধ্যার হালকা টিফিন‌, রকের আড্ডা থকে সাহিত্যের আসর বা খেলা নিয়ে আলোচনা— মুড়ির জুড়ি নেই। রাজনীতির ময়দানেও তার কদর কম নয়। পথে-প্রচারে বেরিয়ে শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে রাজনৈতিক কর্মীরা মুড়িতেই ভরসা রাখছেন।

যে দাওয়ায় বসে প্রদীপবাবু, বিধায়ক আমজাদ হোসেনরা মুড়ি-আড্ডায় মেতেছিলেন, সেই বাড়ির মালিক মায়া সিংহ বলেন, ‘‘এখানে মুড়ির চল। আড্ডা হলেই মুড়ি চাই। সবাই মিলে এক জায়গা থেকে মুড়ি খাওয়ার আনন্দই আলাদা।’’ পোড়খাওয়া বাম নেতা প্রদীপবাবুর সংযোজন, ‘‘আসলে মুড়ি-চানাচুর খেতে অনেক সময় লাগে। সেই ফাঁকে সুখদুঃখ নিয়ে আলোচনা হয়ে যায়।’’

Advertisement

সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, এটা প্রচারের চমক নয়। রোজই সকাল-সন্ধ্যায় মুড়ি চলে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঠোঙা ভরে কর্মীদের মুড়ি দেওয়া বামপন্থী দলের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ জুড়ে দেন, ‘‘কম খরচে মুড়িতে পেট ভরে। কথাও সারা যায়। আমরা তাই মুড়ি পছন্দ করি। পার্টি অফিসেও সকাল-সন্ধ্যা মুড়ি খাওয়ার চল দীর্ঘদিনের।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পালের বক্তব্য, ‘‘আমরাও তো পার্টি অফিসে ছোলা, চানাচুর বা বাতাসা দিয়ে মুড়ি খাই। দলের প্রার্থীদের হয়ে যেখানেই ভোটের প্রচারে যাচ্ছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুড়ি খাচ্ছি সবাই মিলে। মুড়ি খেলে কয়েক ঘণ্টার জন্য নিশ্চিন্ত।’’

শাসক দলও মুড়ি-প্রীতিতে পিছিয়ে থাকতে নারাজ। চণ্ডীত‌লার তৃণমূল নেতা কৌশিক শীল তো কর্মীদের মুড়ি খাওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন। আদান গ্রামের একটি বাড়িতে ছায়াঘেরা উঠোনে আলুর দম সহযোগে মুড়ি দিয়ে পাত পেড়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। ফেসবুকে ঘুরছে সেই ছবি। কৌশিকের কথায়, রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচারের জন্য রাস্তাতেই কেটে যাচ্ছে। দুপুরের দিকে কোনও কর্মীর বাড়িতে চাটাই পেতে আলুর দম বা তরকারি দিয়েই মধ্যহ্নভোজ সেরে ফেলা হচ্ছে। তাঁর সংযোজন, ‘‘কখনও কখনও বাতাসা আর জল দিয়েও মুড়ি খাচ্ছি। রাস্তার আঁর পাঁচটা খাবারের থেকে মুড়িতে শরীরটাও ভাল থাকে।’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুড়ি-তেলেভাজার প্রতি আকর্ষণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হরিপালের তৃণমূল নেতা সমীরণ মিত্র বলছেন, ‘‘এক ঠোঙা মুড়ি চিবোতে চিবোতে দিব্যি অনেকটা পথ হাঁটাও যায়।’’

চিকিৎসকেরাও মুড়িকে দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, মুড়িতে কার্বোহাইড্রেট থাকে। তার সঙ্গে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন‌ এবং মিনারেলের সংযোজন জরুরি। তার সঙ্গে জল। চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাসের কথায়, ‘‘মুড়ি সহজপাচ্য। তার সঙ্গে ছোলা অথবা তরকারি মিশিয়ে নিলে সুষম খাদ্য পেটে পৌঁছে যাবে।’’

রাজনীতিতে বিকল্প নিয়ে চর্চা চলতে পারে। তবে, মুড়ির বিকল্প মেলা ভার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement