আতান্তরে: সমরের ছবি হাতে বাবা-মা। ছবি: দীপঙ্কর দে
পেরিয়ে গিয়েছে পনেরোটা দিন। বিএসএফে কর্মরত থাকা তাঁর ছেলে যে ‘পার্সেল বোমা’ রাখার ঘটনায় যুক্ত, এ কথা এখনও মানতে পারছেন না জনাইয়ের বৃদ্ধা সন্ধ্যা পাল।
শুক্রবার বিকেলে প্রায়ান্ধকার টালির চালের একচিলতে ঘরে বসে বৃদ্ধার প্রশ্ন, ‘‘দেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনও কাজ ছেলে করতে পারে না।’’ সন্ধ্যাদেবীর স্বামী নয়নরঞ্জনবাবুর দাবি, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ছেলেকে কোনও ভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।’’
ওই দম্পতির ছোট ছেলে সমর পাল জম্মু-কাশ্মীরের সাম্বা জেলায় বিএসএফে কর্মরত ছিলেন। চার বছর পরে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। চলতি মাসের ৬ তারিখে এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ৯ জানুয়ারি সাম্বা থেকে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের চার জনের একটি দল এসে হুগলি জেলা পুলিশের সাহায্যে সমরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অভিযোগ, ক্যাম্পে সমর আইইডি (ইম্প্রোভাইজ়ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ভর্তি একটি পার্সেল রেখেছিলেন। ছুটিতে বাড়িতে আসার আগে তিনি ‘পার্সেল বোমা’টি তাঁর ক্যাম্পের মেন গেটের বাইরে রেখে আসেন বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। সাম্বার সিনিয়র পুলিশ সুপার শক্তি পথিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই জওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে সমর বেলুড়ের লালবাবা কলেজে কমার্স নিয়ে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময়েই তিনি পরীক্ষা দিয়ে বিএসএফে চাকরি পান। কাজে দক্ষতার জন্য ছ’ফুটের উপর লম্বা, পেটানো চেহারার যুবকটির সুনাম ছিল বাহিনীতে। তিনি এনএসজি প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে গুজরাতে কর্মরত থাকার সময়ে তিনি সে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেহরক্ষী ছিলেন টানা তিন বছর। সেই কাজের সুবাদে মোদীর কাছ থেকে তিনি পুরস্কারও পান।
একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সমর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। বাহিনীর কোনও এক জনের উপরে কিছু বিষয়ে তাঁর প্রতিশোধ-স্পৃহা জন্মেছিল। সেই কারণে তিনি ওই ‘পার্সেল বোমা’ রেখেছিলেন কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ সব কথা অবশ্য নয়নবাবুরা জানেন না। তিনি বলেন, ‘‘ওখানকার পুলিশ যখন ছেলেকে নিয়ে যেতে এল, তখন তো কিছু বলল না। ছেলে দেশের জন্য টানা ১৬ বছর জীবন হাতে করে জম্মু-কাশ্মীর, শ্রীনগর, আমদাবাদ-সহ নানা প্রান্তে কাজ করেছে। কী এমন অবিশ্বাসের কাজ করল ও?’’ সন্ধ্যাদেবীর প্রশ্ন, ‘‘ও যদি কিছু করেই থাকবে, তা হলে ছুটিতে বাড়ি আসতে দিল কেন? ওখানেই আটকাতে পারত। এর পিছনে কী আছে জানি না।’’
আমদাবাদে রয়েছেন সমরের বড়দা বিশ্বজিৎ। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘ভাই কী করছে, আমরা জানি না। আমি ছোট থেকে ওকে মানুষ করেছি। আমি নিশ্চিত, ও কোনও অন্যায় করেনি। ওর বিরুদ্ধে কোনও অন্যায় প্রমাণও করা যাবে না। আইন, আদালত, বিচারের উপর ভরসা
আছে আমাদের।’’