তদন্ত: সোমবার আরামবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। —নিজস্ব িচত্র
অভিযোগ উঠেছিল প্রায় ৫০ দিন আগে। অবশেষে আরামবাগের ভুয়ো ক্লাবের নামে সরকারি অনুদান তুলে নেওয়ার ঘটনার তদন্ত শুরু হল।
সোমবার সকালে জেলা যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া আধিকারিক অলিভিয়া রায়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দল সরেজমিনে আরামবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ‘নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ’ নামে ওই ক্লাবের খোঁজ করতে আসেন। তদন্তকাকীরা ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে এবং তৃণমূল নেতা নীতীশ ভট্টাচার্যের সঙ্গেও কথা বলেন। নীতীশের বিরুদ্ধেই আরামবাগ থানা থেকে অনুদানের চেক সই করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। নীতীশ সে কথা স্বীকারও করেছিলেন।
নবপল্লির বাসিন্দারা তদন্তকারীদের ওই ক্লাবের হদিশ দিতে পারেননি। পরে নীতীশকে সঙ্গে নিয়ে তদন্তকারীরা ওই ওয়ার্ডেরই আরামবাগ স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় যান। সেখানে খানাকুলের এক ব্যক্তির একটি তিন তলা ভবনের নীচের তলায় একটি ঘর পরিদর্শন করে তাঁরা ফিরে যান। ভবনের মালিক অবশ্য বাড়ি ছিলেন না।
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্লাব হিসেবে ওই ফাঁকা ভাড়াঘরটি দেখিয়েছেন নীতীশ। সেখানে ক্লাবের নামের কোনও অস্তিত্ব মেলেনি। এ নিয়ে নীতীশ কোনও কথা বলতে অস্বীকার করেন। জেলা যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া আধিকারিক অলিভিয়া রায় বলেন, “তদন্ত সবে শুরু হল। কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হবে। এ দিনের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে।” আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “ক্লাব নিয়ে অভিযোগ সত্য বা মিথ্যা, যা-ই হোক, আমাদের সরকার দুর্নীতিকে যে প্রশ্রয় দেয় না, এই তদন্ত তারই প্রমাণ।”
১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ‘নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ’ নামে কোনও ক্লাবের অস্তিত্ব নেই বলে এলাকাবাসী প্রথম থেকে দাবি করে আসছেন। অথচ, ওই ক্লাবের নামেই সরকারি অনুদান বরাদ্দ হয়েছে। গত বছরের বরাদ্দ ২ লক্ষ টাকা তোলার পর ফের এ বছরের ১১ এপ্রিল বরাদ্দের ১ লক্ষ টাকার চেক নীতিশ তুলে নেন বলে অভিযোগ। তার কয়েক দিন পরেই এ কথা জানাজানি হতে হইচই শুরু হয়। বিরোধীরাও প্রশ্ন তোলেন।
অনুদান পেতে গেলে ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দাখিল করতে হয়। ক্লাব না-থাকা সত্ত্বেও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখানো হল কী করে, সেই প্রশ্নও ওঠে। কোন ক্লাব অনুদান পাবে, সে ব্যাপারে স্থানীয় বিধায়করা সাধারণত ক্লাবের জমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখে সুপারিশ করেন। বিধায়ক ছাড়াও এলাকার সাংসদ বা কোন মন্ত্রীও সুপারিশ করতে পারেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
বিধায়ক বলেন, ‘‘আমরা স্বচ্ছতা চাই। ভুয়ো নথিপত্র দাখিল করে আমাদের কাছে কেউ শংসাপত্র নিয়ে থাকলে সেটা জানা দরকার। ভুয়ো প্রমাণ হলে এতদিন পর্যন্ত পাওয়া অনুদানের সমস্ত টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।”