প্রতীকী ছবি।
নদী বাঁধ মেরামতির কাজ যখন গুটিয়ে আনার কথা তখন হাওড়ার বহু জায়গায় বাঁধের কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে এ বছর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে বাসিন্দাদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মত তিন দিন পরে আসছে পূর্ণিমার ভরা কোটাল। এই সময়ে নদীর জল ফুলে অনেকটা ভিতরে ঢুকে আসে। এই ভরা কোটালকে বানও বলা হয়। এই জলের তোড়ে ভাঙা বাঁধের অংশ দিয়ে জল ঢুকে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এই ভরা কোটাল নিয়ে চিন্তিত সেচ দফতরও।
দফতরের মাথা ব্যাথার কারণ হল, বাউড়িয়ার অধিকারী পাড়া এবং উলুবেড়িয়া এসডিপিও অফিসের সামনে দু’টি এলাকা। আমপানে অধিকারী পাড়ায় হুগলি নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। আগে থেকে ভাঙন আছে এসডিপিও অফিসের সামনে হুগলি নদীর পাড়ে। দু’টি এলাকাতেই এখনও পর্যন্ত ভাঙন মেরামতির কাজ শুরু হয়নি। বাউড়িয়া অধিকারীপাড়ার ভাঙন মেরামতির দায়িত্বে থাকা সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর নির্মাণভূক্তি (১) এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে কাজটি করতে কত টাকা লাগবে তার হিসাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন এলে কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে ভরা কোটালের সময়ে জল এলে কী হবে? নিম্ন দামোদর নির্মাণভুক্তি (১) এর তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
ভরা কোটালে একইভাবে বিপদ হতে পারে এসডিপিও অফিসের সামনেও। এই এলাকার দায়িত্বে আছে সেচ দফতরের অধীন নিম্ন দামোদর নির্মাণভূক্তি (২)। এই বিভাগ সূত্রেও জানানো হয়েছে, ভাঙন মেরামতির প্রস্তাবিত খরচ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তা এখনও অনুমোদন হয়ে না আসায় মেরামতির কাজ শুরু হয়নি। ভরা কোটাল মোকাবিলার জন্য তাঁদেরও আপৎকালীন প্রস্তুতি আছে বলে এই বিভাগের বাস্তুকারেরা জানিয়েছেন।
এ দিকে লকডাউন এবং তারপর আমপান ঝড়-এই জোড়া ফলায় জেলা জুড়েই বাঁধ মেরামতির কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। বাঁধ মেরামতির কাজ সাধারণত শুরু হয় নভেম্বর মাসে। তা জুন মাসে বর্ষা পড়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর বাঁধ মেরামতির কাজ নভেম্বরে শুরু হলেও মার্চ মাসের শেষে লক ডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। দিন ১৫ আগে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরুর অনুমতি দেওয়া হলেও তা এখনও পুরোদমে চালু হয়নি।
মূলত সমস্যা দেখা দিয়েছে দু’টি। বাঁধ মেরামতির জন্য ঝাড়গ্রাম থেকে বোল্ডার আনার অনুমতি মিলছে না। দক্ষ মজুরও পাওয়া যাচ্ছে না। ওই মজুররা আসেন মূলত পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া থেকে। করোনা আবহে তাঁদের কাজের জায়গায় আসার ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তাঁরা আসেননি। এক ঠিকা সংস্থার কর্ণধার জানান, হাওড়ায় করোনা ছড়ানোয় সংক্রমণের ভয়ে অন্য জেলা থেকে দক্ষ মজুরেরা আসছেন না। স্থানীয় মজুরদের নিয়ে কোনওমতে ঠেকা দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বোল্ডার-সহ বাঁধ মেরামতির অন্য উপকরণগুলি আনার জন্য যদিও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সেই অনুমতি পেতে কালঘাম ছুটছে বলে ঠিকা সংস্থাগুলির কর্ণধারদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন।
এর মাঝে ফের হল আমপান। তার জেরে বহু জায়গায় নদীর বাঁধে গাছ পড়ে যায়। ফলে ভাঙনের অংশে যেতে ঠিকা সংস্থাগুলিকে বেশ বাধা পেতে হয়। সব মিলিয়ে পরস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক বলে স্বীকার করেছেন সেচ দফতরের কর্তাদের একটা বড় অংশও।
যে সব জায়গায় কাজ হচ্ছিল সেগুলি হল, উলুবেড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হুগলি নদীর বাঁধ ও পাড় মেরামতি। জয়পুরের দক্ষিণ ভাটোরা এবং শ্যামপুরের শসাটিতে রূপনারায়ণ নদের পাড় মেরামতি এবং উদয়নারায়ণপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দামোদর নদের বাঁধ মেরামতি। গত বছর দামোদরের বাঁধ ভেঙে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ নম্বর ব্লকে বন্যা হয়। সেইসব ভাঙা অংশও মেরামতি হচ্ছিল। কাজের ব্যাঘাত ঘটছে প্রায় সব জায়গাতেই।
সময়ে বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ না হলে যেমন বন্যার আশঙ্কা আছে, তেমন সামনেই আছে পূর্ণিমায় ভরা কোটালের ভয়। ভরা কোটালে জোয়ারের জল শ্যামপুরের গড়চুমুক থেকে হুগলি ও দামোদর নদে ঢুকে পড়ে। অন্যদিকে গাদিয়াড়া থেকে রূপনারায়ণে জোয়ারের জলও ঢুকে পড়ে। এই জল সাধারণত পাঁচ ছয় দিন থেকে যায়। তখন হাওড়ার নদ, নদী খালবিলগুলি ভরা থাকে। এই অবস্থায় যদি আবার ডিভিসি জল ছাড়ে সেই সাঁড়াসি চাপে ভাঙা বাঁধ থেকে বড় বিপদ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন সেচ দফতরের বাস্তুকারদের একটা বড় অংশ। আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘আমি অনেক আগেই সেচ দফতরে চিঠি লিখে বাঁধ মেরামতির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই হয়নি। কোটালে কী হবে বুঝতে পারছি না!’’
এ বিষয়ে সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর নির্মাণভূক্তি ১ এবং ২ সূত্রে জানানো হয়েছে, বোল্ডার আনা বা মজুরের সমস্যা মেটানোর জন্য বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। ভরা কোটালের বিপদ মোকাবিলা করার জন্য আপৎকালীন প্রস্তুতিও রাখা আছে।