জাঁতাকলে দু’জেলার স্বর্ণশিল্প

সোনার বাজার মাছি তাড়াচ্ছে ধনতেরসে

হুগলির উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়া আর অন্য দিকে, হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, আন্দুল বাজারের অবস্থা তথৈবচ। মাথায় হাত সোনা ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

প্রকাশ পাল ও সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৫
Share:

ধনতেরসে সোনার বাজার জমল না দুই জেলাতেই। প্রতীকী ছবি।

একে আর্থিক পরিস্থিতি মন্দা। তায় সোনার দাম চড়া। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো শুরু হয়েছে নিম্নচাপের বৃষ্টি।

Advertisement

এই তিনের জাঁতাকলে ধনতেরসে সোনার বাজার জমল না দুই জেলাতেই। হুগলির উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়া আর অন্য দিকে, হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, আন্দুল বাজারের অবস্থা তথৈবচ। মাথায় হাত সোনা ব্যবসায়ীদের।

আজ, শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ধনতেরস তিথি। বিশেষ এই তিথিতে ধাতুজাতীয় সামগ্রী কিনলে সংসারের মঙ্গল হয় বলে বিশ্বাস। মূলত অবাঙালিদের মধ্যে এই রীতি প্রচলিত। বছর কয়েক ধরে বাঙালিদের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই ধনতেরসের কয়েক দিন আগে থেকে বাজার জমে উঠছিল। গয়নার বিক্রি বাড়ছিল। কিন্তু এ বার ছবিটা একেবারে উল্টো।

Advertisement

গত দু’দিনের যা প্রবণতা তাতে বিক্রি খুব একটা বাড়বে না বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, সোনার দাম এ বারে লাগাম ছাড়া। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ ক্যারেট পাকা সোনার দাম ছিল প্রায় ৪০ হাজার টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। যা গত বছরের এই সময়ের থেকে প্রায় ৮ হাজার টাকা বেশি। তার উপরে মন্দার কারণে খরিদ্দারদের হাতে নগদ নেই বললেই চলে।

বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির শ্রীরামপুর শাখার কার্যকরী সভাপতি তথা রাজ্য কোর কমিটির সদস্য বিবেকানন্দ মজুমদার বলেন, ‘‘নোটবন্দি এবং জিএসটির জন্য আমাদের ব্যবসার যে ক্ষতি শুরু হল, তা থেকে এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারিনি। তার উপরে সোনার দাম যে হারে বাড়ছে, বলার কথা নয়। ছ’মাস আগে ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল ৩০ হাজার টাকার আশপাশে। এখন তা ৪০ হাজার টাকা। অবস্থাটা ভাবুন! বিক্রি তলানিতে।’’

ডোমজুড়, বড়গাছিয়া এবং বলুহাটিতে গয়নার দোকান রয়েছে শেখ নাসিম আলির। তিনি বলেন, ‘‘গত বছরও ধনতেরসে ভাল ব্যবসা করেছি। এ বছর তো গত দু’দিন ধরে দোকানে খদ্দেরই নেই।’’ উলুবেড়িয়ার ঝুমা চৌধুরীও বললেন, ‘‘প্রতি বছরই ধনতেরসে কিছু কেনাকাটা করি। কিন্তু এ বার সোনার দাম খুব বেশি। হাতে পয়সাও কম। কিছু কিনতে পারব বলে মনে হয় না।’’

উত্তরপাড়ার একটি শোরুম থেকে বেরনোর মুখে কোতরংয়ের বাসিন্দা বিপাশা সেন বলেন, ‘‘ধনতেরসে ভাল গয়না গড়ানোর চেষ্টা করি। এ বার একটা আংটি কিনতে পারলাম।’’ আরামবাগের পিসি সেন রোডের অলঙ্কার ব্যবসায়ী সুজিৎ দে বলেন, ‘‘অন্য বছর এই সময় যা বিক্রি হয়, তার অর্ধেকও হচ্ছে না।’’ আরামবাগের চিন্ময় ঘোষ প্রতি বার ধনতেরসে সোনার জিনিস কেনেন। এ বার, রুপোর কয়েন কিনবেন।

চুঁচুড়া, চন্দননগর শহরের বিভিন্ন দোকানে সোনা-রুপোর গয়না ছাড়াও কয়েন, বিভিন্ন পাথর, বাড়িতে ঠাকুরকে সাজানোর গয়না মজুত রয়েছে। চুঁচুড়ার সায়রা মোড়ের একটি গয়নার দোকানের মা‌লিক প্রদ্যুৎ কর্মকার বলেন, ‘‘এই সময় ক্রেতার ভিড় সামলানো যায় না। এ বার গয়না কে‌নার সেই হিড়িকটাই উধাও।’’

শ্রীরামপুরের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘নোটবন্দি, জিএসটির ধাক্কাই সামলাতে পারিনি। গত কয়েক বছরে প্রচুর নামি সংস্থার শোরুম এসেছে। ওঁদের পুঁজি অনেক। বৈচিত্রও বেশি। তাতে আমাদের খদ্দের আরও কমেছে।’’

(তথ্য সহায়তা: নুরুল আবসার, পীযূষ নন্দী ও তাপস ঘোষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement