Goghat

জোঁকের ভয়ে নুন হাতে মাঠে, হয়নি শৌচাগার

গ্রামের যত্রতত্র শৌচকর্ম নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় অশান্তি লেগে থাকে। যাঁদের ঘরে শৌচালয় রয়েছে, তাঁরা দুষণ ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন অন্যদের বিরুদ্ধে। এ নিয়েও পঞ্চায়েতে নালিশ জানানো হয়েছে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৫৫
Share:

নুন ছিটিয়ে জোঁক ছাড়ানো হচ্ছে। শুনিয়া গ্রামে। ছবি সঞ্জীব ঘোষ

খালের পাড়ে প্রাতঃকৃত্য করছে বছর সাতেকের পলাশ ধাউড়। অদূরে নুনের প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে তার মা চম্পাদেবী। ছেলেকে জোঁকে ধরলেই নুনের ছিটে দেবেন তিনি। এ দৃশ্য হামেশাই দেখা যায় গোঘাটের শুনিয়া গ্রামে। পলাশ একা নয়, গ্রামের অনেকেই প্রাতঃকৃত্য সারতে যান খালের পাড়ে বা জমির আলে। তাঁদের কারও বাড়িতেই শৌচাগার নেই। যদিও গ্রামে ঢোকার মুখেই চোখে পড়ে ‘নির্মল গ্রাম’ লেখাসাইন বোর্ড।চম্পার অভিযোগ, “আমাদের তিনটি পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দার বাড়িতেই শৌচাগার নেই। বছরভর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এ ভাবেই মাঠে বা ক্যানেলের পাড়ে আসতে হয়। বর্ষায় জোঁকের উপদ্রব হয়। তাই সঙ্গে নুন রাখি।”

Advertisement

শুনিয়া গ্রাম গোঘাট ১ ব্লকের গোঘাট পঞ্চায়েতের অধীনে। পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েত তৃণমূল পরিচালিত। গ্রামে ঢোকার মুখে ‘নির্মল গ্রাম’ বলে সাইন বোর্ড পোঁতা রয়েছে। আরামবাগ থেকে গোঘাট পাকা রাস্তা বরাবর ‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’ এবং ‘নির্মল পঞ্চায়েত সমিতি’ লেখা ফলকও দেখা গিয়েছে। অথচ গ্রামের ক্যানেলের পাড় ও মাঠময় ছড়িয়ে থাকে মলমূত্র। শুনিয়া গ্রামের ভেলোরপাড়া, দাসপাড়া এবং রায়পাড়ার ১৫০ টি পরিবারের মধ্যে ১০০ টি পরিবারেরই শৌচালয় নেই বলে অভিযোগ। মিঠু ধাউড়ে, শিউলি ধাউড়ে, কার্তিক দোলুই, বিজয় ধাউড়ে, যমুনা দোলুই, কৃষ্ণা দাস, রেনুকা রায় ধাউড়ের মতো অনেক গ্রামবাসীর অভিযোগ, “নির্মল জেলা ঘোষণা হওয়ার পরে পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনকে আমাদের এলাকার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও পদক্ষেপই তাঁরা করেননি।”

গ্রামের যত্রতত্র শৌচকর্ম নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় অশান্তি লেগে থাকে। যাঁদের ঘরে শৌচালয় রয়েছে, তাঁরা দুষণ ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন অন্যদের বিরুদ্ধে। এ নিয়েও পঞ্চায়েতে নালিশ জানানো হয়েছে। আবার প্রকাশ্যে শৌচকর্ম করেন যাঁরা, পঞ্চায়েতের কাছে তাঁদের সাফ কথা “শৌচাগার করে না-দেওয়া পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে মলমূত্রই ত্যাগ করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।” পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতারও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

পঞ্চায়েত প্রধান মণীষা সেন বলেন, “এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যেরা যে সব নামের তালিকা জমা দেন, সেগুলো দফায় দফায় প্রকল্পের তালিকায় নথিভুক্ত করে পাঠানো হচ্ছে। ওই তিনটি পাড়ায় এতগুলি পরিবারের শৌচালয় কেন করা হয়নি, তা জানা নেই। তবে এ বার তা গড়ে দেওয়া হবে।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বাসুদেব রায় বলেন, “এখানে তিনটি পাড়ার প্রায় ১৫০ পরিবারের মধ্যে ১০০ পরিবারের শৌচাগার নেই। আগের পঞ্চায়েত বোর্ড কী করেছে জানি না। আমি শৌচালয় গড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছি।” প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম বিডিও (গোঘাট ১) প্রবীরকুমার দত্ত বলেন, “গত ডিসেম্বর মাস থেকে ফের স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের তহবিল থেকে শৌচাগার নির্মাণ শুরু হয়েছে। আমাদের ব্লকে মোট আটটি পঞ্চায়েতের জন্য ৪,১৯৬ টি পরিবারের শৌচাগার নির্মাণের অনুমোদন মিলেছে। সেগুলির মধ্যে প্রথম দফায় ৮৮১ টি নির্মাণের অর্থ এসেছে। গোঘাট পঞ্চায়েতে এ বার ১৩৫ টি শৌচগার হবে।”

হুগলি জেলাকে ‘নির্মল জেলা বলে ঘোষণা করা হয়েছে ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘোষণার পরেই স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে অর্থ দেওয়া বন্ধ হয়। বিভিন্ন পঞ্চায়েত থেকে শৌচগার নির্মাণের দাবি ওঠায় একশো দিনের কাজ প্রকল্পে সেই শৌচাগার নির্মাণ করতে বা হয়েছিল। গত বছর সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচের চেয়ে সরঞ্জাম খাতে বেশি খরচ হয়ে গিয়েছিল। এটা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের আইনের পরিপন্থী। তবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় যাঁরা ঘর পাচ্ছেন, তাঁদের ওই প্রকল্পেই শৌচাগার গড়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলা পরিষদের সচিব হেমন্ত ঘোষ বলেন, “মিশন নির্মল বাংলা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এর পরেও কোনও ব্যক্তির বাড়িতে শৌচগার না-থাকলে আমরা তা গড়ে দেব। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement