পিকনিক স্পটে প্লাস্টিক-থার্মোকল বর্জনের দাবি পরিবেশকর্মীদের

চড়ুইভাতিকে কেন্দ্র করে পরিবেশের এই দূষণ রোধ করতে রাজ্য প্রশাসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে চিঠি দিল হুগলির চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০২
Share:

প্রতীকী ছবি

সকাল থেকে তারস্বরে ডিজে বাজিয়ে উদ্দাম নাচ। বেলাশেষে মাটিতে বা নদী-জলাশয়ের ধারে প্লাস্টিক-থার্মোকলের থালা-বাটি-গ্লাস ছড়িয়ে ফিরে যাওয়ায়। শীতের মরসুমে বেশির ভাগ পিকনিক স্পটের এটাই চেনা ছবি। যার ফলে, পরিবেশে মারাত্মক দূষণ ছড়ায় বলে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ। চড়ুইভাতিকে কেন্দ্র করে পরিবেশের এই দূষণ রোধ করতে রাজ্য প্রশাসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে চিঠি দিল হুগলির চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’। এ ব্যাপারে বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে অ্যাকাডেমির তরফে।

Advertisement

গোটা শীতকালেরাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পিকনিক স্পটগুলিতে চড়ুইভাতির আসর জমে ওঠে। গঙ্গা-সহ বিভিন্ন নদীর ধারে রান্না-খাওয়া চলে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, প্রশাসন হাত গুটিয়ে থাকায় লাগামহীম ভাবে দূষণ ছড়ায়। বড়দিন, নববর্ষ, প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো বিশেষ দিনে অসংখ্য মানুষ উৎসবে মাতেন। পিকনিক স্পট থেকে পার্ক ভর্তি হয়ে যায় পর্যটক এবং পিকনিক দলের ভিড়ে।

চন্দননগরের ওই সংগঠনের সদস্যরা জানান, গত দু’বছর ধরে তাঁরা এবং আরও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা বিভিন্ন পিকনিক স্পটে সমীক্ষা এবং দূষণ রোধে প্রচার চালান। তাতে সচেতনতার অভাবের ছবি স্পষ্ট হয়ে যায়। ওই সমস্ত জায়গায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বা গ্লাস, কাপ অথবা থার্মোকলের থালা-বাটি ব্যবহার নিয়ে আদৌ সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। বহু ক্ষেত্রেই ব্যবহারের পরে ওই সব প্লাস্টিক বা থার্মোকলের সামগ্রী ফেলা হয় নদীর ধারে। সেগুলো নদীর জলেও পড়ে। এর ফলে নদী দূষিত হয়। জলজ বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব পড়ে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের তরফে ডিজে বন্ধের ব্যাপারে

Advertisement

আন্দোলন করা হলেও এই ক্ষেত্রেও পুরোমাত্রায় সচেতনতা আসেনি। শুধু পিকনিক স্পটেই নয়, ম্যাটাডর বা অন্য গাড়িতে অত্যন্ত জোরে ডিজে বক্স বাজিয়ে রাস্তা দিয়ে যায় পিকনিকের দল। ডিজে বাজানোর ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না।

পরিবেশ অ্যাকাডেমির সভাপতি তথা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোটা শীতকাল জুড়ে পিকনিক স্পটগুলির জন্য পরিবেশ সম্পর্কিত সতর্কতা চূড়ান্ত ভাবে লঙ্ঘিত হয়। কিছু মানুষের সাময়িক আনন্দের জন্য পরিবেশের এত বড় ক্ষতি মানা যায় না।’’

শীত পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে পিকনিকের মরসুম। সে কথা মাথায় রেখেই সম্প্রতি রাজ্য প্রশাসন এবং পরিবেশ দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছে পাঠানো চিঠিতে গোটা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই সংগঠনের তরফে। একই সঙ্গে চিঠিতে তাঁদের পরামর্শ, বিভিন্ন জেলা পরিষদ বা পুরসভায় রাজ্য প্রশাসনের তরফে নির্দেশিকা জারি করা হোক, যাতে পিকনিক স্পট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সময় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বা কাপ-গ্লাস, থার্মোকলের থালা-বাটি এবং ডিজে বক্সের নিষেধাজ্ঞার কথা পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়। বনাঞ্চলে, বিশেষত উত্তরবঙ্গ এবং সুন্দরবনের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় চড়ুইভাতির অনুমতি দেওয়া বন্ধ করা হোক। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে জরিমানা আদায় করা হোক। সেই টাকা সাফাইয়ের কাজে লাগানো হোক।

প্রত্যেকটি পিকনিক স্পটকে প্লাস্টিক, থার্মোকল এবং ডিজে বক্স বর্জিত এলাকা বলে ঘোষণা করারও দাবি জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement