প্রতীকী ছবি।
আপাতত সন্ধি!
বিজেপিকে রুখতে দুর্গাপুজোর পরেই হুগলিতে আন্দোলনে ঝাঁপাচ্ছে ‘ঐক্যবদ্ধ’ তৃণমূল। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের গড়ে দেওয়া কোর কমিটির প্রথম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে। শনিবার শ্রীরামপুরে ওই বৈঠকের পরে দলের ‘সঙ্ঘবদ্ধ’ চেহারা তুলে ধরতে একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কমিটির সদস্যেরা।
বৈঠকে দৃশ্যত কোনও বিভেদ-বিভাজন ছিল না বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার, মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, অসীমা পাত্র, দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব, বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল, বেচারাম মান্না এবং স্নেহাশিস চক্রবর্তী— সকলেই উপস্থিত ছিলেন।
কিছু দিন আগে আরামবাগে দলীয় কর্মসূচিতে কল্যাণ দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। এ দিন বিভেদের প্রশ্ন উড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘হুগলিতে তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ ছিল, আছে, থাকবে। সবাই একসঙ্গে মিলে কাজ করব।’’ গত লোকসভা ভোটে যে সব জায়গায় বিজেপির তুলনায় দল পিছিয়ে পড়েছিল, সেখানে দলকে জেতানোর লক্ষ্যে দল ঝাঁপাবে বলে তিনি জানিয়ে দেন। বেশ কিছু জায়গাতেই দলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কোন্দল তৃণমূলকে চিন্তায় রেখেছে। সেই দ্বন্দ্ব সামাল দিতে না পারলে দলকে আগামী বিধানসভায় ভুগতে হতে পারে বলে নেতৃত্বের অনেকে মানছেন।
কয়েক মাস আগে দিলীপ যাদবকে দ্বিতীয় বারের জন্য জেলা সভাপতি মনোনীত করে দল। তার পর থেকেই নেতাদের একাংশের বক্তব্যে দলের ‘অনৈক্য’ প্রকাশ্যে চলে আসে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। গত বুধবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে ‘যুযুধান’ নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। অভিষেক ছাড়াও সুব্রত বক্সী, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর উপস্থিত ছিলেন। অভিষেকের ফোনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলির নেতাদের রীতিমতো ভর্ৎসনা করেন কোন্দল নিয়ে। আরামবাগ মহকুমায় দলীয় সংগঠনের হাল নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন শীর্ষ নেতৃত্ব। নেত্রীর পরামর্শে আট সদস্যের কোর কমিটি গড়ে দেওয়া হয়।
সেই কমিটির প্রথম বৈঠকের পরে কল্যাণ জানান, পয়লা নভেম্বর থেকে পরের দশ দিনে (৬ নভেম্বর
বাদে) ন’টি বিধানসভায় জনসভা করা হবে। প্রথম দিন সভা হবে বলাগড়ে। তার পরে গোঘাট, পুরশুড়া, আরামবাগ, চুঁচুড়া, খানাকুল, সিঙ্গুর, ধনেখালি এবং পান্ডুয়া বিধানসভা এলাকায়। কোর কমিটির সদস্যেরা সভায় থাকবেন। ৮ নভেম্বর সিঙ্গুরের সভায় দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী থাকবেন। ওই সমস্ত জায়গায় জনসভা নিয়ে আগামী সোমবার এবং ২৮ অক্টোবর প্রস্তুতি-সভা হবে। এ দিনের সভার সিদ্ধান্ত কার্যকর করবেন জেলা সভাপতি।
তৃণমূলের এই ‘ঐক্যবদ্ধ’ চেহারাকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। ওই দলের শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসু বলেন, ‘‘মুখে ঐক্যের কথা বলতে হচ্ছে মানেই বুঝে নিন, আসল ছবিটা কেমন। ঐক্যবদ্ধ যে ছিলেন না, ঐক্যের কথা বলে সেটা তাঁরাই প্রমাণ করলেন।’’