থইথই: জমা জল পুজো মণ্ডপের সামনে। লিলুয়ার কুমোরপাড়ায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
নিকাশি সংস্কারে খাতায় কলমে খরচ হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। কিন্তু তার পরেও কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, তা গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে ফের প্রমাণ হয়ে গেল। বৃষ্টি থামার ২৪ ঘণ্টা পরে, বৃহস্পতিবার দুপুরেও জমা জলে ভাসছে হাওড়ার লিলুয়া এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা।
আবর্জনায় প্রায় বুজে যাওয়া নিকাশি নালা এবং ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে পুজোর আনন্দ মাটি হয়ে যেতে বসেছে লিলুয়ার ওই এলাকাবাসীদের। জমা জলের জন্য বন্ধ রয়েছে পুজোমণ্ডপ তৈরির কাজ। পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকায় ৪টি পাম্প চালিয়ে জল বের করার চেষ্টা হয়েছে বটে, কিন্তু তাতে সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়নি। পাঁক জমে বুজে যাওয়া নিকাশি নালা সংস্কারের কোনও উদ্যোগ এ দিনও নেওয়া হয়নি।
হাওড়া পুরসভার সঙ্গে বালি পুরসভার সংযুক্তিকরণের পরেও লিলুয়ার ৬৫ এবং ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, লিলুয়ার রবীন্দ্র সরণি, কুমোরপাড়া, ঝিল লেন, পাঁজা পাড়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কার তো বটেই, এমনকি রাস্তা সারাই বা আলোর কোনও কাজই হয়নি। ফলে কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া-সহ পতঙ্গবাহিত নানা রোগের আঁতুড়ঘর হয়ে দাঁড়ায় ওই এলাকা। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই এলাকার দু’জন বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ দিন লিলুয়ার রবীন্দ্র সরণি এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বৃষ্টি থেমে গেলেও কোথাও তিন ইঞ্চি আবার কোথাও ইঞ্চি চারেক জল জমে রয়েছে। প্লাস্টিক ও আবর্জনা জমে বহু দিন আগে থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঝিল লেনের মূল নর্দমাটি। প্রায় একই হাল আশপাশের নিকাশি নালাগুলিরও।
ডলি মোদক নামে এলাকার এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘জমা জলে পুজোর আনন্দটাই মাটি হয়ে যেতে বসেছে। কাল থেকে জল নামছে না। রাস্তায় বড়বড় গর্ত। রাতে রাস্তার আলো জ্বলে না। দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছি।’’ জমা জলের কারণে পুজো মণ্ডপের কাজ শেষ করতে পারছেন না কুমোরপাড়া শক্তি সঙ্ঘের সদস্যেরা। ওই ক্লাবের সম্পাদক গোপাল দাস বলেন, ‘‘পুরসভাকে বারবার চিঠি দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এলাকায় উন্নয়নের কোনও কাজই হয়নি।’’
তবে হাওড়া পুরসভার বক্তব্য, ওই এলাকায় বৃষ্টির পরে জল জমে যাওয়ার সমস্যা দীর্ঘদিনের। জমা জলের কারণেই রাস্তাঘাট মেরামত করা যায়নি। বৃষ্টি বন্ধ হলেই মেরামত করা হবে। হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় জল বার করার জন্য অনেকগুলি পাম্প চলছে। আশা করা যায়, শুক্রবারের মধ্যে জল নেমে যাবে। নিকাশির কাজ কেন হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’