‘মানবিক’ তথ্যচিত্রের একটি দৃশ্য। —নিজস্ব িচত্র
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই যখন তুঙ্গে, তখনই অস্বস্তিকর কিছু ঘটনা নজরে এসেছে প্রশাসনের। কোথাও করোনা-আক্রান্তের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে, কোথাও আবার বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন করোনা-উপসর্গে ভোগা ব্যক্তি। এই প্রেক্ষিতে করোনা-নিয়ে সামাজিক বার্তা দিতে তৈরি হল তথ্যচিত্র ‘মানবিক’। লক্ষ্য, ‘করোনা-রোগীদের সঙ্গে ভেদভাব নয়, নয় সামাজিক বয়কট’— এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া। চুঁচুড়ার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৈরি ১৫ মিনিটের ওই তথ্যচিত্র হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় দেখানো হবে। পুরসভার সহযোগিতায় তথ্যচিত্রটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই সংস্থার এক কর্তা।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি চুঁচুড়ার কারবালায় করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তির লজে হামলা হয়। ইট ছুড়ে কাচ ভাঙা হয় লজের। সেখানেই নিভৃতবাসে ছিলেন লজের মালিক এবং করোনা আক্রান্ত তাঁর পরিবেরের কয়েকজন সদস্য। অন্য দিকে, করোনার উপসর্গ থাকায় চুঁচুড়ার ধরমপুরের এক বাসিন্দার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ
করা হয় বলে অভিযোগ। প্রশাসনের বক্তব্য, সচেতনতার অভাবেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।
রবিবার হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার হলে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হয়। হাজির ছিলেন চুঁচুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি প্রদীপ দাঁ এবং পুরসভার প্রশাসক গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়-সহ অনেক। এতে অভিনয় করেছেন পাঁচ জন। করোনা-আক্রান্ত রোগী, চিকিৎসক, নার্স এবং সাধারণ এলাকাবাসীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁদের।
গৌরীকান্তবাবুর বক্তব্য, ‘‘অনেক করোনা-আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তাতে তাঁরা অবসাদে ভুগছেন। মানুষকে সচেতন করতে তথ্যচিত্রটি তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, অনেক জায়গাতেই করোনা-আক্রান্ত রোগীরা সামাজিক বয়কটের শিকার হচ্ছেন। হেনস্থা করা হচ্ছে তাঁদের। নানা ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে তাঁদের সঙ্গে। ফলে, আক্রান্ত রোগী এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা অবসাদে ভুগছেন। করোনাকে হারাতে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সকলকে করোনা-আক্রান্তদের প্রতি মানবিক হতে হবে। করোনা যুদ্ধে জয়ী ব্যক্তি বা তার পরিবারকে একঘরে করে রাখলে হবে না। রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। সেই লক্ষ্যে শহরের আনাচে কানাচে ঘনবসতি এলাকায় তথ্যচিত্রটি দেখানো হবে। এটি প্রদর্শনের জন্য কেবল্ অপারেটরদের সঙ্গেও কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য ইন্দ্রজিৎ দত্তের কথায়, ‘‘আক্রান্তদের তিরস্কার করে দূরে সরিয়ে দেওয়া অমানবিকতার পরিচয়। তাই মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।’’ চিত্রনাট্যের এক অভিনেতা অরিজিৎ দাস জানান, ‘‘করোনা যে ভাবে মহামারীর আকার ধারণ করেছে, তাতে প্রত্যেক মানুষকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি করোনা-আক্রান্তদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ যাতে কেউ না করে তা নিয়েও সচেতন হওয়া জরুরি।’’