জোট করে ভোটে ধরাশায়ী হওয়ার পরে ফ্রন্টের অন্দরে শরিক দলের ক্ষোভ ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে। জোটের ব্যর্থতা নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে আজ, রবিবার বৈঠকে বসছে ফব’র হাওড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলী। সেই বৈঠকে বড় শরিক সিপিএমের বিরুদ্ধে অসন্তোষ সামনে আসার সম্ভাবনা প্রবল। কেননা, ফব’র বহু নেতাই জোটের ব্যর্থতার জন্য সিপিএমকেই দুষছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত দলের রাজ্য কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জেলা নেতারা জানান। কাল, সোমবার ফব’র রাজ্য কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা।
ফব’র এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘হাওড়ায় সিপিএমের পরে আমরা ফ্রন্টের সব থেকে বড় শরিক। জোটের প্রচারের রণকৌশল ঠিক করতে সিপিএমের জেলা কার্যালয়ে আমাদের একদিন মাত্র ডাকা হয়েছিল। সেখানে কংগ্রেসের নেতারাও ছিলেন। কিন্তু বুথ পর্যায় পর্যন্ত কী ভাবে জোটের প্রচার হবে, শক্তির বিচারে কে কোথায় অগ্রণী ভূমিকা নেবে, সে সব কিছু আলোচনাই হল না। তারপরে বিভিন্ন পদযাত্রা বা মিছিলে কংগ্রেসের কয়েকজন কর্মী নাম-কা-ওয়াস্তে থাকলেও খুব বেশি গা ঘামাতে দেখা যায়নি তাঁদের।’’ দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘‘এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে জোটের অবসান ঘটেছে। বামফ্রন্টগত ভাবেই ফের সব কিছু শুরু করতে হবে।’’
শিবপুর, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ ও শ্যামপুর— ’৭৭ সাল থেকে জেলার এই চারটি আসনে বামফ্রন্টের তরফ থেকে ফরওয়ার্ড ব্লক লড়াই করে আসছিল। এ বারে জোটের স্বার্থে শ্যামপুরের আসনটি কংগ্রেসকে দেওয়া হয়। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, ফব তার নিজের প্রতীকে লড়ে ৩টি আসনে যেমন হেরেছে, আর শ্যামপুরেও জিততে পারেনি কংগ্রেস। ফব নেতারা মনে করছেন, এই আসনে লড়ার পরেও যদি হারতে হতো, তা হলেও সংগঠনের পৃথক অস্তিত্ব থাকত। কিন্তু এ বার আম ও ছালা দুই-ই গেল।
ফব কর্মীদের বক্তব্য, তৃণমূলকে হারাতে যখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রস্তাব আসে তখন তাঁরা তা মেনে নেন। কিন্তু জোট কার্যত হয়ে দাঁড়ায় সিপিএম-কংগ্রেসের বোঝাপড়া। জোট প্রক্রিয়া কার্যকর করতে হলে কংগ্রেসের সঙ্গে বামের শরিক দলগুলিরও যে আলোচনার প্রয়োজন তা স্বীকার করা হয়নি বলে তাঁদের দাবি। ফলে, বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে একটা বড় ফাঁক থেকে গিয়েছে। তাঁদের ক্ষোভ, অধীর চৌধুরী বা রাহুল গাঁধীর মতো নেতাদের আনা হল শুধু সেখানেই, যেখানে কংগ্রেসের প্রার্থী আছেন। অথচ ফব প্রার্থীদের জন্য ওই নেতাদের প্রচারে আনা হয়নি।
ফব’র শ্যামপুরের এক নেতা বলেন, ‘‘জোট গঠনের দু’মাস আগে পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইন্দিরা গাঁধী এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আমরা কামান দেগেছি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে টু জি স্পেকট্রাম, কোল ব্লক বণ্টন-সহ নানা কেলেঙ্কারি নিয়ে গলা ফাটিয়েছি। তারপরেই দেখা গেল, আমাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীকে। ফলে, মানুষ বোধ হয় আমাদের রাজনৈতিক সততা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তারই প্রতিফলন ফলে।’’ তাঁর প্রশ্ন, এই আসন ফবকে দিলে কী এর থেকেও খারাপ ফল হতো?