গুহ রোড অবরোধ স্থানীয়দের। বুধবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
এলাকায় জমে থাকা আর্বজনা, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা এবং ডেঙ্গির প্রকোপের প্রতিবাদে পথে নামলেন হাওড়ার পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। বুধবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে এলাকায় ঠিক মতো আবর্জনা সাফাই করছে না পুরসভা। নিকাশির অবস্থাও বেহাল। অথচ এলাকায় ডেঙ্গি মারাত্মক ভাবে ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই ওই ওয়ার্ডের ১৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। এর মধ্যে একই বাড়িতে তিন জনের ডেঙ্গি হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা, আট বছরের শিশুকন্যা আনোখা বর্মার। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, একটি শিশুর মৃত্যুর পরেও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
চলতি মরসুমে হাওড়ায় ডেঙ্গির প্রভাব গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সরকারি ভাবে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। এর মধ্যে উত্তর হাওড়ায় ডেঙ্গির প্রভাব সব থেকে বেশি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, উত্তর হাওড়াতেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এর মধ্যে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হল ১ নম্বর ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ার খবর পেয়েও পুরসভা নির্বিকার। এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা এলেও মশার লার্ভা মারার কোনও উদ্যোগ সে ভাবে চোখে পড়ছে না। ফলে ডেঙ্গির প্রকোপও কমছে না। এরই প্রতিবাদে এ দিন সকাল ৮টা থেকে এলাকার বাসিন্দারা গুহ রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। অবরোধের জেরে গুহ রোড এবং জে এন মুখার্জি রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা।
এলাকার বাসিন্দা দুর্গাবতী দেবী বলেন, ‘‘সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়ির একতলায় নর্দমা উপচে জল ঢুকে যায়। সেই নোংরা জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয় শিশু থেকে বয়স্কদের। রাস্তারও বিভিন্ন জায়গায় জল জমে থাকে। পুরসভার সাফাইকর্মীদের তো এলাকায় দেখাই যায় না।’’
একই অভিযোগ করেছেন এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর সাবিত্রীদেবী সাহু। তিনি বলেন, ‘‘আবর্জনা, নিকাশি ও ডেঙ্গি নিয়ে পুর কমিশনারকে বারবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। আসলে হাওড়া পুরসভায় সাফাই দফতরে স্থায়ী কর্মীর অভাব রয়েছে। ১০০ দিনের কর্মীদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। অন্য দিকে, স্বাস্থ্য দফতরের মশাদমন শাখার কর্মীরা এলাকায় না আসার ফলে ডেঙ্গি ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে।’’
এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে গুহ রোড, জয়বিবি রোড, নস্করপাড়া লেন, গোসাইঘাট এলাকায় নর্দমার জল উপচে উঠে এসেছে রাস্তায়। ভ্যাটগুলিও আবর্জনায় ভর্তি। বিভিন্ন রাস্তায় যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, এর পরেও যদি আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার না হয়, তা হলে তাঁরা জি টি রোড
অবরোধ করবেন।
ওই এলাকায় সাফাইকর্মীরা যান না বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা মানতে রাজি নন হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার সাফাইকর্মীরা নিয়মিত সব এলাকায় কাজ করেন। আসলে প্রতি বছরই দীপাবলির সময়ে ভ্যাটগুলিতে আবর্জনা বেশি পড়ে। এ বারও তাই-ই হয়েছে। আমাদের লোক ঠিক সময়ে গিয়ে আবর্জনা তুলে নেবে।’’ ডেঙ্গি নিয়ে পুর কমিশনারের বক্তব্য, ওই এলাকায় ডেঙ্গি খুব মারাত্মক আকার নিয়েছে এমন তথ্য পুরসভার কাছে নেই। তবে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের অভিযোগ, উত্তর হাওড়ার কিছু প্রাক্তন কাউন্সিলর স্বাস্থ্যকর্মীদের এলাকায় ঘুরতে সাহায্য করছেন না। তাই গোটা এলাকা জুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করতে পারছেন না।