Guptipara Child Death

স্বর্ণাভ খুনের কথা কবুল জেঠিমা-ঠাকুমাদের, দাবি

তদন্তের স্বার্থে জেঠু-ঠাকুর্দার দু’টি ঘর এবং উঠোনে টিনের ছাউনি দেওয়া তাঁদের শৌচাগারটি সিল করেছে পুলিশ। দু’টি জায়গাই দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বলাগড় শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৫
Share:

স্বর্ণাভর (ইনসেটে) শোকার্ত মা। শৌচাগারটি ঘিরে দিয়েছে পুলিশ। ছবি: বিশ্বজিৎ মণ্ডল।

ঠিক কী কারণে এবং কী ভাবে গুপ্তিপাড়ার বাঁধাগাছির চার বছরের স্বর্ণাভ সাহা খুন হল, তা স্পষ্ট হল না সোমবার রাত পর্যন্ত। তবে, ওই খুনের ঘটনায় দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পরে রবিবার রাতে শিশুটির ঠাকুর্দা শম্ভুনাথ, ঠাকুমা চায়না, জেঠিমা টুম্পা সাহাকে গ্রেফতার করে বলাগড় থানার পুলিশ। বাড়িতে তাঁদের শৌচাগার থেকেই স্বর্ণাভর দেহ মিলেছিল।

Advertisement

হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক দাবি করেছেন, ‘‘জেরায় ধৃতেরা অপরাধ কবুল করেছেন। অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্ত চলছিল। তার সঙ্গে খুনের ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ধৃতদের দিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।’’

তদন্তের স্বার্থে জেঠু-ঠাকুর্দার দু’টি ঘর এবং উঠোনে টিনের ছাউনি দেওয়া তাঁদের শৌচাগারটি সিল করেছে পুলিশ। দু’টি জায়গাই দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। বসেছে পুলিশ পিকেট। ধৃতদের সোমবার চুঁচুড়া আদালতে পেশ করা হলে তিন জনকেই ৫ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

Advertisement

স্বর্ণাভর মা সুপ্রিয়ার অভিযোগ, ‘‘ছেলের গলায়, হাত-পায়ে, মুখে, কপালে কালো দাগ ছিল। রবিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ পুলিশ বাড়ি থেকে রাস্তায় সরতেই ছেলের দেহ শৌচালয়ে ফেলে রেখে গিয়েছে ওরা।’’ শিশুটির বাবা যাদব বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী একটি স্বনির্ভর দলের নেত্রী। বৌদি ছিল হিসাবরক্ষক। হিসাবে গোলমাল করায় গোষ্ঠীর মহিলারা বৌদিকে কিছুদিন আগে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। এ নিয়েও দুই জায়ের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হত। আমরা ভাল থাকি, ওদের সহ্য হচ্ছিল না। ছেলের উপরে আক্রোশ মেটাল।’’

ওই পরিবার সূত্রে খবর, শ্বশুর শম্ভুর সঙ্গেও নানা বিষয়ে সুপ্রিয়ার ঝগড়া হত। শিশুটির জেঠু সুরজিৎ সাহা কর্মসূত্রে ওড়িশায় থাকেন। ঘটনা শুনে তিনি বাড়ি ফিরেছেন।
আগামী ২ ডিসেম্বর স্বর্ণাভর জন্মদিন। স্থানীয় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে নার্সারি ওয়ানে পড়ত শিশুটি। স্কুলের শিক্ষিকারা সোমবার স্বর্ণাভর বাড়িতে আসেন। তাঁরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকা ছিল থমথমে। শিক্ষিকা ঝুমা পাল বলেন, ‘‘এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় যুক্তদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’

প্রতিবেশী সুশীল ঘোষকে ‘দাদু’ বলত স্বর্ণাভ। তাঁদের বাড়িতে যেত। সুশীল বলেন, ‘‘ওর ঠাকুর্দাকে বলতে শোনা যায়, জ্যোতিষী বলেছেন, পূর্ব দিকের বাড়িতে নাতি রয়েছে। বিকেল ৪টের পর ফিরে আসবে। আমার বাড়ি লক্ষ্য করেই ওই কথা বলছিল। বাচ্চাটার জেঠিমার চোখে শোক দেখা যায়নি।’’

গত শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ খেলতে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে শিশুটি নিখোঁজ হয়। খবর পেয়েই এফআইআর-এর ভিত্তিতে দ্রুত অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। বাড়ি-সহ গোটা এলাকায় তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়। পদস্থ পুলিশকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। ড্রোন ওড়নো হয়। পুলিশ কুকুর আনা হয়। রবিবার সকাল পৌনে ৬টা নাগাদ শৌচাগার থেকে দেহটি মেলে। শম্ভুই নাতির দেহ প্রথম দেখেন বলে দাবি করেছিলেন। এলাকাবাসী জানান, শনিবার ওই শৌচাগারে অনেকেই যান। ওই রাতেও শৌচাগারে দেহ ছিল না। কে দেহটি ওখানে রাখল, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement