বিষ্ণুর পরিবারকে নিয়ে অাদালত চত্বরে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
মুণ্ড ছাড়া চুঁচুড়ার রায়বেড়ের নিহত বিষ্ণু মালের বাকি দেহাংশ উদ্ধার করে ফেলেছে পুলিশ। শনিবার শেওড়াফুলির গড়বাগান এলাকার একটি পুকুর পাড়ের গর্ত থেকে নিহতের কাটা ধড়টিও মিলেছে। রবিবার বিকেলে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে সেই দেহাংশের ময়নাতদন্ত হয়। দেহাংশটি শনাক্ত করেন বিষ্ণুর বাড়ির লোকেরা। তার আগে, এ দিন দুপুরে খুনে গোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে চুঁচুড়া আদালত চত্বরে মিছিল করেন এবং বিক্ষোভ দেখান নিহতের বাড়ির লোকজন এবং কয়েকশো এলাকাবাসী।
এ পর্যন্ত ওই খুনের ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে, মূল অভিযুক্ত সমাজবিরোধী বিশাল দাসের এখনও নাগাল মেলেনি। শনিবার বিশালের সহযোগী মান্তু ঘোষকে গ্রেফতারের পরেই গড়বাগানে তার বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়ের গর্ত থেকে বিষ্ণুর কাটা ধড় মেলে। পুলিশের কাছে ধৃত মান্তু কবুল করে, ধড়টি ফেলার দায়িত্ব তার উপরেই দিয়েছিল বিশাল।
মান্তুকে পুলিশ রবিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করাতে পারে, এই ধারণা থেকেই এ দিন সেখানে হাজির হয়েছিলেন বিষ্ণুর বাবা-মা, বোন এবং এলাকাবাসী। গোলমালের আশঙ্কায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে, পুলিশ মান্তুকে আদালতে হাজির করানোর ঝুঁকি নেয়নি। ভিডিয়ো কনফারেন্সে বিচারক মান্তুকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
বিষ্ণুর বোন কাজল বলেন, ‘‘দাদাকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু যারা দাদাকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে, তারা ফাঁসির মতো কঠোর সাজা পেলে তবেই দাদার আত্মা শান্তি পাবে।’’ বিক্ষোভরত এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘জেলা সদরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে, এক নিরীহ যুবককে অপহরণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হল। ঘটনার কোনও প্রতিবাদ হল না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা থাকছে।’’
খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বিশালের খোঁজেই এখন হন্যে পুলিশ। এ পর্যন্ত ধরা পড়া পাঁচ দুষ্কৃতীকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে তার নাগাল পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা। চন্দননগর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বিষ্ণুর দেহের টুকরো করা পাঁচটি অংশই উদ্ধার হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই কাটা মুণ্ডটিও মিলবে। বিশালকেও গ্রেফতার করা যাবে।’’
তবে, এ দিন বিষ্ণুর ধড়টি শনাক্ত করলেও তা আর নিতে চাননি পরিবারের লোকেরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারটি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাঁরা ধড়টি নিতে অস্বীকার করেন। প্রশাসনের উদ্যোগেই ধড়টি সৎকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, চুঁচুড়ার বাসিন্দা বিশাল সেখানকার এক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। মেয়েটির পরিবার ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। পরে মেয়েটির সঙ্গে বিষ্ণুর সম্পর্ক হয়। সেই আক্রোশেই বিষ্ণুকে খুন করে বিশাল দেহটি ছ’টুকরো করে বলে অভিযোগ।