সঙ্কটাপন্ন: আরামবাগ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। —নিজস্ব চিত্র।
দৈনিক গড়ে ৪০০-৫০০ ইউনিট রক্তের জোগান দিতে হয় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ককে। এখন ১০ ভাগের এক ভাগও হচ্ছে না। একদিকে করোনা আবহ, অন্য দিকে রাজনৈতিক ডামাডোলে রক্তদান শিবির কার্যত বন্ধ। তাতেই রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ দিন ৩০ ইউনিটের বেশি রক্তের জোগান দেওয়া যাচ্ছে না বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নোটিস টাঙিয়েছেন, রক্তের প্রয়োজনে রোগীর পরিজনকে রক্তদাতা জোগাড় করে আনতে হবে। সমস্যা দেখে অ্যাম্বুল্যান্স-চালক বা স্থানীয় যুবকেরা বিক্ষিপ্ত ভাবে রক্ত দিচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা নেহাতই কম।
হাসপাতাল-সুপার সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, ‘‘কোনও রকমে সামাল দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অন্তর্বিভাগে দৈনিক গড়ে ৪০ ইউনিট রক্ত লাগে। প্রতিদিন ১২-১৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগী রক্ত নিতে ভর্তি হন। মঙ্গলবার ৬৭ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হয়েছে। দু’দিনও চলবে না। এবি-নেগেটিভ, ও-নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত নেই।’’ সঙ্কট কাটাতে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়েও রক্তদান শিবির করা হচ্ছে বলে সুপার জানান। এ দিন পুরশুড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিবির হয়। চিকিৎসক, এলাকার সব স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে ৫১ জন রক্ত দেন বলে জানান বিএমওএইচ সুব্রত বাগ।
আরামবাগ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের উপরে মহকুমার প্রায় ৫০টি নার্সিংহোম, সংলগ্ন বিভিন্ন জেলার কিছু স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানও নির্ভরশীল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। হাসপাতালের দাবি, গত দেড় মাসে বেশ কিছু রক্তদান শিবির থেকে গড়ে মাত্র ২০-৩০ ইউনিট রক্ত মিলেছে।
হুগলির উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) অরবিন্দ তন্ত্রী বলেন, ‘‘সারা বছরে আমাদের জেলায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। এ বার অনেকটা ঘাটতি থেকে গিয়েছে। সঙ্কট মেটাতে সমস্ত ব্লক স্তরে চিকিৎসক-সহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্তদানের অনুরোধ করা হয়েছে। ওই শিবির চলছে।’’
শ্রীরামপুর ওয়ালশ, চন্দননগর এবং চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের ঘাটতি অনেকটা সামাল দেওয়া গিয়েছে বলে ওই হাসপাতালগুলির দাবি। ওয়ালশের ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, শিবিরের ঘাটতি অনেকটাই মিটেছে। দিন কয়েকের মধ্যে চণ্ডীতলা এবং জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে শিবির হয়েছে। হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের রোগীদের রক্ত দিতে সমস্যা হচ্ছে না।
অন্য জায়গা থেকে রক্ত নিতে এলে জরুরি প্রয়োজন দেখলে ফেরানো হচ্ছে না। আগামী শনিবার কানাইপুর হাসপাতালে শিবির হবে। ওই দিন এবং পরের দিন আরও দু’টি জায়গায় শিবির রয়েছে।
তবে, শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে আকাল পুরোপুরি মেটেনি। ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবি ও সোমবার শিবির হয়েছে। তাতে পজ়িটিভ গ্রুপের আকাল কিছুটা কাটলেও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের অভাব রয়েই গিয়েছে। শিবিরের জন্য সামাজিক মাধ্যমে আবেদন করা হচ্ছে।