প্রতিবাদীর মৃত্যুতে চোলাই নির্মূলে এককাট্টা মহিলারা

বাঁশের ঘায়ে এক জ‌নের প্রাণ যাওয়ার পরে গ্রামবাসীরা উপলব্ধি করেছেন, মদই হল যত নষ্টের গোড়া! অতএব গ্রামের আনাচে-কানাচে মদ বিক্রি বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মহিলারা।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৪
Share:

শ্যামল বাগ

বাঁশের ঘায়ে এক জ‌নের প্রাণ যাওয়ার পরে গ্রামবাসীরা উপলব্ধি করেছেন, মদই হল যত নষ্টের গোড়া!

Advertisement

অতএব গ্রামের আনাচে-কানাচে মদ বিক্রি বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মহিলারা। শুধু তাই নয়, প্রশাসন না পারলে তাঁরা যে নিজেরাই পথে নামবেন এমন কথাও বলতে শুরু করেছেন।

চণ্ডীতলার থেড়ো গ্রামে মদ খেয়ে গালাগালির প্রতিবাদ করায় শনিবার, বিশ্বকর্মা পুজোর দুপুরে পাশের পাড়ার কিছু যুবক শ্যামল বাগকে (৫০) পিটিয়ে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ। রবিবার নিহতের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, পড়শি অনেক মহিলা জড়ো হয়েছেন। ঘটনার কথা তুলতেই কয়েকজন ফুঁসে উঠলেন। বললেন, ‘‘গ্রামে চোলাই বন্ধ না করলে হয়তো এমন ঘটনা আরও ঘটবে। পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয় না। ঠিক করেছি, এখন থেকে আমরাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব।’’ মহিলাদের এই ক্ষোভ সেখানে পৌঁছেছিল কি না জানা যায়নি। তবে গ্রামের যে প্রান্তে মদ-জুয়ার আসর বসে বলে অভিযোগ, সেই জায়গাটা অবশ্য এ দিন ছিল সুনসান।

Advertisement

যদিও পুলিশ ও আবগারি দফতরের দাবি, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলে।

নিহতের পরিবার জানায়, শ্যামলবাবু খেতমজুরি করতেন। শনিবার কাজে যাননি। দুপুর ৩টে নাগাদ খাওয়া-দাওয়া সেরে বাড়ির কাছেই মাচায় বসতে যান। অভিযোগ, সেই সময় পাশের বাগপাড়ার কিছু ছেলে মদ্যপ অবস্থায় গালিগালাজ করছিল। তিনি প্রতিবাদ করেন। দু-পক্ষে কথা-কাটাকাটি হয়। তার মধ্যেই মদ্যপ যুবকদের আরও কিছু সঙ্গী সেখানে চলে আসে। মাটিতে পড়ে থাকা বাঁশ তুলে শ্যামলবাবুর মাথায় মারা হয়। রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন প্রৌঢ়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার প্রতিবাদে তেতে ওঠে এলাকা। মাচা ভাঙচুর করেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

নিহতের ছেলে পঞ্চা বাগ ছ’জনের বিরুদ্ধে চণ্ডীতলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রবিবার বিকেল পর্যন্ত অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন জনকে আটক করা হয়েছে। এ দিন শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়।

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, দিন কয়েক আগে অভিযুক্ত এক যুবকের আত্মীয়ার সঙ্গে এক গ্রামবাসী অশালীন আচরণ করেন। তা নিয়ে দু’পক্ষের ঝামেলা হয়। ওই গ্রামবাসীকে যুবকটি চড় মারে। গত শুক্রবার তিনি যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশে ডায়েরি করেন। যুবকটির অভিযোগ, শ্যামলবাবুর কথাতেই ওই গ্রামবাসী পুলিশে যান। এ জন্য শ্যামলবাবুর উপর ওই যুবকের রাগ ছিল। মাচার সামনে তা নিয়েই দু’জনের বচসা হয়। তারপরেই ওই ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবার অবশ্য বিষয়টি মানতে নারাজ। শ্যামলবাবুর স্ত্রী শেফালিদেবী বলেন, ‘‘স্বামী লোকের বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। সেটাই কাল হল।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষই খেতমজুরি বা ছোটখাট কাজ করেন। উপার্জনের অনেকটাই তাঁরা চোলাইয়ের নেশায় ওড়ান বলে অভিযোগ। এ নিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে অশান্তিও হয়। মাঝেমধ্যে পুলিশ হানা দিলেও এ সব থামানো যায়নি। তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি প্রবীন ঘোষ বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেই পঞ্চায়েতের তরফে মদ্যপান বিরোধী প্রচার চালানো হয়েছে। গ্রামের মহিলারা এ ব্যাপারে এগিয়ে এলে সেই কাজ আরও জোরদার হবে।’’

দিন কয়েক আগে জেলারই গোঘাটের কয়েকটি গ্রামে চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দিয়েছিলেন মহিলারা। মাস কয়েক আগে সিঙ্গুরেও একই ঘটনা ঘটে। এ বার চণ্ডীতলাতেও গোলমালের ঘটনায় চোলাই নির্মূলে এককাট্টা এলাকার মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা।

যাঁদের অনেককেই এদিন বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘গোঘাটের ওরা পারে, আর আমরা পারি না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement