আরামবাগের হরিণখোলার কাদিপুরে মুণ্ডেশ্বরী নদীবাঁধের অবস্থা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
হুগলি জেলায় আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের ৬৩টা পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৩টিই বন্যাপ্রবণ বলে চিহ্নিত। বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর মার্চ মাস থেকেই প্রশাসনিক তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। এ বার লকডাউন বিধির গেরোয় সব বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সেচ দফতরের ওই কাজে ছাড় মিলেছে। কিন্তু ভাঙা এবং দুর্বল নদীবাঁধ চিহ্নিত করাটুকুও শুরু হল না।
সামনে বর্ষা। নদীঘেরা আরামবাগে তাই করোনাভাইরাসের পাশাপাশি বন্যা নিয়েও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সেচ দফতরও দিশাহারা। জেলা সেচ দফতরের (নিম্ন দামোদর সেচ বিভাগ) এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কুন্দন কুমার বলেন, “নদীবাঁধ সংক্রান্ত কাজকর্ম নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি।”
নির্দেশ মিললেও বিশ্ব ব্যাঙ্কের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের পাঁচটি কাজও শুরু হয়নি। কাজগুলির মধ্যে রয়েছে: হুগলির মুণ্ডেশ্বরী নদী এবং রনের খালের মোট ২২.১৬ কিমি অংশে পলি তোলা, হুগলি ও হাওড়া জেলার অংশে আপার রামপুর খাল এবং হুড়হুড়া খালের বাঁ দিকের বাঁধ সংস্কার, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা-১ ব্লক এবং বাগনান ১ ব্লকের আওতায় থাকা দামোদর নদের দু’দিকের ৫৮.৬১ কিমি বাঁধের উন্নয়ন ইত্যাদি।
প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা জেলা সেচ দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার যিশু দত্ত বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের বাড়তি কিছু সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। ঠিকাদাররা কাজের ক্ষেত্র থেকে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের নতুন করে আনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনিক যে সব ছাড়পত্র প্রয়োজন, সেগুলি নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, শীঘ্রই কাজ শুরু করতে পারব।”
মহকুমা সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর মার্চ মাস থেকেই বিভিন্ন ব্লক এবং মহকুমা স্তরে বৈঠকগুলি থেকে বাঁধ মেরামতি সংক্রান্ত পরিকল্পনা উঠে আসে। সেই বৈঠকেই প্রতি বছর মহকুমাশাসকের গড়ে দেওয়া যৌথ কমিটি বিভিন্ন নদীবাঁধ ঘুরে পলকা এলাকা শনাক্ত করা এবং তা সংরক্ষণের প্রকল্প তৈরি করে জেলায় পাঠায়। এ বছর এখনও বৈঠকই হয়নি। অন্যান্য বছর এই সময়ে বিভিন্ন নদীবাঁধের নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর ২০০টি করে বালির বস্তা মজুত রাখা হয় আপতৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। এ বছর সেই কাজেও দেরি হবে বলে সকলেই ধরে নিচ্ছেন।
গতবার বন্যার পরেই দামোদর নদের পুরশুড়ার শ্রীরামপুর এলাকা-সহ চার জায়গার বাঁধ সংস্কারের যে প্রকল্প আগে জমা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি কবে অনুমোদন হয়ে টেন্ডার হবে, তা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন সেচ দফতরের কর্তারা।
আরামবাগ মহকুমায় বন্যা হয় চার নদনদী (দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর এবং রূপনারায়ণ) উপচে। মূলত প্লাবিত হয় আরামবাগ, পুরশুড়া, খানাকুল-১ ও ২ এবং গোঘাট-১ ও ২ ব্লক। এ ছাড়া আরামবাগ পুর এলাকার সাতটি ওয়ার্ডও জলমগ্ন হয়।
সংশ্লিষ্ট বিডিওরা জানিয়েছেন, নদীবাঁধগুলির ভাঙা এবং পলকা অংশ কম নয়। লকডাউন চলতে থাকায় সেগুলি চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। তাই সেগুলির ভবিষ্যৎও অজানা। বাঁধ সংস্কারে প্রশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগও কম নয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আগের বছর বন্যার পর দেদার সময় থাকা সত্ত্বেও সেচ দফতর থেকে বা ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে নিয়ম
করে বর্ষার মুখে জুন মাস নাগাদ অধিকাংশ বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়। ফলে, বর্ষার আগে কম সময়ের মধ্যে বাঁধ শক্তপোক্ত ভাবে মেরামত হয় না। সামান্য জলের তোড়েই বাঁধ ভেঙে যায়।
বর্ষা আসছে। অন্যান্য বার এই সময়ে দুই জেলার বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলিতে বাঁধ মেরামতির কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। এ বার লকডাউনে পরিস্থিতি ভিন্ন। সময়ের মধ্যে সেই কাজ শেষ হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবস্থার খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ হুগলি জেলা।