বিপর্যস্ত: ফাঁকা খাদিনা মোড়। ছবি: তাপস ঘোষ
যেন অঘোষিত বন্ধ!
রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। দোকানপাট বন্ধ। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় নেই। ট্রেনে নামমাত্র যাত্রী। ফেরি চলাচলে নিষেধ।
বুলবুলের জেরে শুক্রবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল দুই জেলাতে। শনিবার সকাল থেকে তার বেগ বাড়ল। তার জেরে অঘোষিত বন্ধের চেহারা নিল দুই জেলার বেশির ভাগ এলাকাই। কখন আসবে বুলবুল, এই জল্পনা শুরু হয়ে যায় সকাল থেকেই। সাধারণ মানুষ বারবার টিভির পর্দায় চোখ রেখেছেন। তৎপরতা বেড়েছে প্রশাসনের।
হুগলির তুলনায় হাওড়াতেই জনজীবন বেশি বিপর্যস্ত হয়। এ দিন বিকেল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে বইতে থাকে ঝোড়ো হাওয়া। তার প্রভাব বেশি টের পাওয়া গিয়েছে মোহনা সংলগ্ন শ্যামপুর-১ ব্লকের বাণেশ্বরপুর-১, নবগ্রাম, বালিজাতুরি, ডিঙেখোলা পঞ্চায়েত এলাকায়। বিকেলের মধ্যেই বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে থাকেন দুর্গতেরা। এখানকার প্রায় ১০০০ মানুষকে তুলে আনা হয় ১৭টি ত্রাণ শিবিরে। শিবিরের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিডিও সঞ্চয়ন পান। অন্য ব্লকগুলি থেকেও দুর্গতদের ত্রাণ শিবিরে আনা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হজার মানুষের ঠাঁই হয়েছে ত্রাণ শিবিরে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিবিরগুলিতে রাতে জেনারেটর এবং মোমবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত কাঁচা ও দুর্বল বাড়িগুলি থেকেই বাসিন্দাদের উঠে আসার জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, সে জন্যই জেনারেটর ও মোমবাতি মজুত রাখা হয়েছে। রাতে রান্না করা খাবারেরও ব্যবস্থা হয়েছে ত্রাণ শিবিরগুলিতে। সংস্লিষ্ট ব্লক স্বাস্থ্য দফতরগুলিকে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখতে। সকাল থেকে জেলাশাসক মুক্তা আর্য বিভিন্ন ব্লকে ঘুরে বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থার তদারক করেন।
উলুবেড়িয়া পুর এলাকায় ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়। যদুরবেড়িয়াতে একটি পাঁচিল ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। পুরকর্মীরা গিয়ে সেটি ভেঙে দেন বলে জানান পুরপ্রধান অভয় দাস। বিকেল পর্যন্ত কোনও প্রাণহানি বা বাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর মেলেনি বলে
প্রশাসন জানিয়েছে।
দু’দিনের বৃষ্টিতে জল থই থই করছে হুগলি শিল্পাঞ্চলের বহু এলাকাতেই। উপচে গিয়েছে নিকাশি নালা। অনেক জায়গাতেই ঢালাই স্ল্যাব দিয়ে নর্দমা ঢেকে ফুটপাত বানিয়েছে পুরসভা। কিন্তু সেই ফুটপাতও চলে গিয়েছে জলের তলায়। উত্তরপাড়ার ভদ্রকালী শান্তিনগর, মধ্য ভদ্রকালী, পলাশ সরণি, পারমার রোড, হিন্দমোটর স্টেশন রোড, কোতরংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে একই ছবি। ভুক্তভোগীরা এ জন্য প্লাস্টিককে দায়ী করছেন। তাঁরা মনে করছেন, প্লাস্টিকের কারণেই জল নিকাশি বাধা পাচ্ছে। উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের দাবি, ‘‘কোনও কোনও এলাকায় সাময়িক জল জমে। আবার তা নেমেও যায়। আগের থেকে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ভাল।’’ শ্রীরামপুর স্টেশন রোড, ধর্মতলায় জল জমেছে। জল স্টেশনের সাবওয়েতেও। বহু মানুষ রেল লাইন দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। বৈদ্যবাটীর কাজিপাড়া, চুঁচুড়া এবং চন্দননগরের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি জল জমার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
হাওড়ার মতো হুগলিতেও সব ঘাট থেকে ফেরি চলাচল এ দিন বন্ধ ছিল। ফলে, কিছুটা সমস্যায় পড়েন হুগলি এবং ও পাড়ের উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন চটকলের শ্রমিকেরা। তাঁদের ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। এ দিন ছুটি ছিল স্কুল-কলেজও। মানুষের মনে ভরসা জোগাতে বিকেলে ভদ্রেশ্বরে মাইকে প্রচার করে পুরসভা। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘বিপর্যয় মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশমতো স্কুল-কলেজ ও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ রাজবলহাটের প্রায় ১৬০ জনকে এবং খানাকুলের ২৫ জনকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরামবাগের সব ব্লকেই অসামরিক বিপর্যয় মোকাবিলা দল মোতায়েন করা হয়েছে। মহকুমাশাসক লক্ষ্মীভব্য তান্নিরু বিভিন্ন গ্রামের স্কুলগুলিকে ত্রাণকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করার জন্য বিডিওদের নির্দেশ দিয়েছেন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল-রুম। ট্রেন চলাচল যাতে স্বাভাবিক থাকে, সে জন্য পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের বেলুড়, বর্ধমান এবং তারকেশ্বর শাখার কামারকুণ্ডুতে ‘টাওয়ার ওয়াগন’-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। যাতে যান্ত্রিক গোলোযোগে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হলে দ্রুত মেরামতি করা যায়।