প্রশাসনের আশ্বাস ছিল গোলমাল হবে না। তবে বামেদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের প্রথম দিনে গোলমাল হল যথেষ্টই। হাওড়া-হুগলি দুই জেলায় ভুগলেন সাধারণ মানুষ। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার তাগিদে পুলিশের তৎপরতার দিকে আঙুল তুললেন বাম নেতারা। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার দুই জেলার পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্তই।
এ দিন সকাল থেকে দফায় দফায় অবরোধে দুই জেলাতেই থমকেছে রেল। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের উলুবেড়িয়া, ফুলেশ্বর এবং চেঙ্গাইল স্টেশনে অবরোধ হয়। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত অবরোধের জেরে আপ লাইনে চারটি এক্সপ্রেস, দু’টি প্যাসেঞ্জার এবং চারটি লোকাল ট্রেনে আটকে পড়ে। ডাউনেও চারটি এক্সপ্রেস, দু’টি প্যাসেঞ্জার এবং তিনটি ইএমইউ লোকাল বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে। ছয়টি আপ, ছয়টি ডাউন এবং ইএমইউ লোকাল এবং একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করতে হয় বলে দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানিয়েছেন।
বন্ধ সমর্থকদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। হুগলির শ্রীরামপুর স্টেশনে অবরোধকারীদের হটাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। এক বন্ধ সমর্থকে পা ভেঙেছে বলেও জানা গিয়েছে। এ দিন সকালে সিপিএম নেতা, শ্রীরামপুরে গত লোকসভার প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকেরা লাইনে বসে পড়েন। শেওড়াফুলি জিআরপি থানার পুলিশ তীর্থঙ্করবাবু-সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। বাকিদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেওয়া হয়।
গাড়ি থামিয়ে ভাঙচুর উলুবেড়িয়ার ডোমপাড়াতে
হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখার পান্ডুয়া স্টেশনেও সিপিএমের বিধায়কের নেতৃত্ব রেল অবরোধ করে। পুলিশ বিধায়ক আমজাদ হোসেন-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। ডাউন কাটিহার এক্সপ্রেস গতি কমিয়ে হাওড়ার দিকে এগোতে শুরু করলে বনধ্ সমর্থনকারীরা লাইনের পাথর ছুড়ে ট্রেন আটকে দেন বলে অভিযোগ। উত্তরপাড়া, রিষড়া, বৈদ্যবাটী, চন্দননগর, পাণ্ডুয়া, জিরাটে রেল অবরোধ হয়। কোথাও গাছের গুঁড়ি, কোথাও স্ল্যাব ফেলে দেওয়া হয় রেল লাইনের উপর। তারকেশ্বর শাখার সিঙ্গুর এবং কর্ড শাখার শিবাইচণ্ডী স্টেশনেও রেল অববোধ হয়।
অবরোধ হয়েছে দুই জেলার সড়কপথেও। বন্ধ সমর্থকেরা এ দিন সকালে উলুবেড়িয়ার নিমদিঘিতে মুম্বই রোড অবরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তা তুলে দেয়। তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বনধ সমর্থকদের সামান্য ধস্তাধস্তিও হয়। আমতার বেতাইয়ে রাস্তা অবরোধ তোলাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বনধ সমর্থকদের হাতাহাতি হয়। উলুবেড়িয়া রেল অবরোধের জন্য লেভেলক্রসিং-এ যে সব গাড়ি আটকে ছিল সেগুলি ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে বনধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে। কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। বনধ সমর্থকেরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সিপিএম নেতা সাবিরুদ্দিন মোল্লার পাল্টা অভিযোগ, ‘‘মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের দলের এক কর্মীর বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।’’ নিরপরাধদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলেও অভিযোগ করেন সাবিরুদ্দিন। এর প্রতিবাদে এ দিন সন্ধ্যায় বনধ সমর্থকেরা উলুবেড়িয়া থানায় বিক্ষোভ দেখান। সাঁকরাইলের চাঁপাতলাতেও তৃণমূল তাঁদের হেনস্থা করেছে বলে বনধ সমর্থকেরা অভিযোগ করেন। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। এ দিন গ্রামীণ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ ৫০ জন বনধ সমর্থককে গোলমাল পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতার করেছে।
একই অভিযোগ করছেন হুগলি জেলা সিপিএমের সম্পাদক দেবব্রত ঘোষও। তাঁর দাবি, ‘‘রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশের নির্মম ভাবে লাঠি চালায়। লাঠিতে আমাদের সমর্থক দেবব্রত ভট্টাচার্যের পা-ভাঙে। ’’ হুগলি জেলা (গ্রামীণ) ও চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ২৫ জনকে গ্রেফতার করে। এ দিন সন্ধ্যায় দলীয় সর্মথকদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে মশাট বাজারে সিপিএম মিছিল করে।
এ দিন সকাল থেকে অবরোধের জেরে জিটি রোড, অহল্যাবাই রোড, জাঙ্গিপাড়া-শ্রীরামপুর রোড সর্বত্রই যানজট হয়। বাদ যায়নি দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েও। জঙ্গলপাড়ায় বন্ধ সমর্থকদের পুলিশ হটিয়ে দিলে ফের মিছিল রাস্তায় ফের বসে পড়ে। ।
হুগলির গ্রামঞ্চলে বন্ধের প্রভাব ছিল কম। আরামবাগ মহকুমায় বনধের প্রভাব কোথাও পড়েনি। হুগলি জেলার শিল্পাঞ্চল ডানকুনি এবং হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকার কল-কারখানা খোলা ছিল। ভদ্রেশ্বর শিল্পাঞ্চলের জুটমিল খোলা থাকলেও শ্রমিক হাজিরা কম থাকে। সকাল থেকে অ্যাঙ্গাস, ডালহৌসি, নর্থ ব্রুক-সহ বেশকিছু মিলের গেটে বনধ্ সমর্থনকারীরা সভা করেন।
উলুবেড়িয়ার বেশির ভাগ চটকল বন্ধ ছিল। জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিল্প তালুকে শ্রমিকদের হাজিরা ছিল কম।