Arambag

শুনশান পল্লিশ্রী, তৈরি কোভিড শ্মশান

পল্লীশ্রী সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের গায়ে প্রশাসনের তদারকিতে কোভিড-শ্মশান নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

Advertisement

পীষূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৮:২২
Share:

অস্থায়ী শ্মশান তৈরির কাজ শেষের দিকে। পল্লিশ্রীতে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাহ করার জন্য অস্থায়ী শ্মশান নির্মাণকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার তেতে উতেছিল আরামবাগের পল্লিশ্রী এলাকা। বুধবার পুলিশি ঘেরাটোপে সেই কাজ সম্পূর্ণ করল প্রশাসন।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই পল্লীশ্রী সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের গায়ে প্রশাসনের তদারকিতে কোভিড-শ্মশান নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মঙ্গলবার ওই কাজে বাধা দিয়ে পথ অবরোধ করেছিলেন স্থানীয় প্রায় ছ’শো বাসিন্দা। মারমুখী বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশও। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙে। পুলিশের বিরুদ্ধেও পাল্টা লাঠি চালানোর অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় ১৩ জন মহিলা-সহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার আরামবাগ আদালতে হাজির করানো হলে ধৃতদের মধ্যে ১৩ জনকে দুই সপ্তাহ জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। অসুস্থ এক মহিলাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

এ দিন পল্লিশ্রী এলাকায় চাপা উত্তেজনা ছিল। ছিল পুলিশের নজরদারি। নতুন করে কোনও গোলমাল বা বিক্ষোভ সেখানে হয়নি। তার মধ্যেই কোভিড শ্মশান বানানোর কাজ পূর্ণোদ্যমে শুরু করে প্রশাসন। দুপুরে কাজের অগ্রগতি দেখতে আসেন মহকুমা শাসক (আরামবাগ) নৃপেন্দ্র সিংহ, এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস। সকাল থেকেই কাজের তদারকি করেছেন আরামবাগ পুরসভার বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান তথা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীয় সদস্য রাজেশ চৌধুরী। কাজ পরিদর্শনের পরে মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘এ দিনই দাহ করার কাজ শুরু হবে। করোনায় মৃতদের দেহ সৎকার করা হলে শ্মশান থেকে এলাকায় সংক্রমণ ছড়াবে বলে যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে ফ্লেক্স টাঙানো হচ্ছে।’’

Advertisement

দ্বারকেশ্বরের রামকৃষ্ণ সেতুর কাছে সেচ দফতরের পরিত্যক্ত জায়গায় গড়ে উঠেছে ওই অস্থায়ী কোভিড শ্মশান। এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের বিক্ষোভকে ঘিরেই মঙ্গলবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল পল্লিশ্রী এলাকা। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে মহকুমা শাসক সাফ বার্তা দিয়ে জানিয়েছিলেন, শ্মশান নির্মাণে বাধা দেওয়া হলে কড়া পদক্ষেপ করবে পুলিশ। পরিস্থিতি উত্তাল হওয়ায় ঘণ্টা চারেক শ্মশান নির্মাণের কাজ বন্ধ ছিল। তারপর ফের সেই কাজ শুরু হয়।

শ্মশানে যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। ঘেরা হয়েছে শ্মশানের চারদিক। ছাউনি দেওয়ার কাজও শেষ। দেহ সৎকারের জন্য ৯০০ বর্গফুট এলাকায় চাতাল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দু’টি দেহ পোড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। মজুত করা হয়েছে কাঠ। পুরসভার তরফে জলের ট্যাঙ্ক দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ এবং জলের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিন রাতেই চারটি দেহ ওই অস্থায়ী শ্মশানে পোড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দিন চারেক ধরে ওই দেহগুলি মহকুমা হাসপাতালের কোভিড মর্গে পড়ে রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, দাহ নিয়ে গোলমালের আশঙ্কায় মৃতের পরিজনেরা দেহ নিতে অস্বীকার করেন। এর পরে দেহগুলি দাহ করার ব্যবস্থা করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল প্রশাসনের কর্মীদের। ফলে, দাহকার্য বাতিল করে ফিরে আসতে হয় তাঁদের। এই পরিস্থিতে গত সোমবার বিকালে মহকুমা শাসক তাঁর কার্যালয়ে পুরসভা, পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই ঠিক হয়, পল্লিশ্রীতে দ্বারকেশ্বর নদের ধারে সেচ দফতরের পরিত্যক্ত জায়গায় অস্থায়ী কোভিড শ্মশান তৈরি করা হবে। সেখানেই পোড়ানো হবে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দেহ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement