— ফাইল চিত্র।
জেলাসদর চুঁচুড়ার বালিকা বাণীমন্দির স্কুলে মিড-ডে মিলে বাচ্চাদের নুন-ভাত খাওয়ানোর অভিযোগ সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসল হুগলি জেলা প্রশাসন। তার জেরে বুধবার হুগলির জেলাশাসক রত্নাকর রাওয়ের নেতৃত্বে জেলার চারটি মহকুমার মোট ১৮টি ব্লকের ১০০০ স্কুলে মিড-ডে মিল, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী-সহ সরকারি সমস্ত প্রকল্পের হাল-হকিকত খতিয়ে দেখেন সরকারি অফিসারেরা। জেলার প্রতিটি ব্লকের বিডিওদের নেতৃত্বে এদিন মোট ৩০০ জন অফিসার বিভিন্ন স্কুল, রেশন অফিসে গিয়ে মিড-ডে মিলের চালের মান পরীক্ষা করে দেখেন। তার মধ্যে মোট ৭টি স্কুলের খাবারের মান যথাযথ না থাকায় জেলাশাসক স্কুল কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
শ্রীরামপুর মহকুমার মোট চারটি ব্লকের সরকারি প্রতিনিধি দল এদিন বিভিন্ন স্কুলে যান। স্কুলগুলির প্রকৃত অবস্থা সরেজমিনে দেখতে জেলার পঞ্চায়েত এবং পুরসভার স্কুলগুলিতে আগাম কোনও খবর না দিয়েই পৌঁছে যান অফিসারেরা। প্রতিটি ব্লকের বিডিওদের নেতৃত্বে সরকারি প্রতিনিধি দলে জয়েন্ট বিডিও এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটরা পরিদর্শনের কাজ করেন।
বৈদ্যবাটী পুরসভার ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুলগুলি পরিদর্শন করেন শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক তনয় দেব সরকার। তিনি এদিন বৈদ্যবাটী চারুশীলা বোস স্কুলে যান। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘আমি যখন স্কুলে পৌঁছই, তখন মিড-ডে মিলের রান্না হচ্ছিল। স্কুলের রান্নার জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। মহিলাদের রান্নার সময় নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়া হয়। আমি নিজে পরীক্ষা করে দেখেছি খাবারের মান যথাযথ।’’
হুগলির জেলাশাসক রত্নাকর রাও এদিন বলাগড়ের সিজা-কামালপুর পঞ্চায়েতের অক্ষয় অম্বিকা প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান কন্যাশ্রী ও যুবশ্রীর টাকা ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো পাচ্ছে কি না। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, জেলার মোট ১০০০টি স্কুলে পরিদর্শন করার। তাঁর মধ্যে ৯১৪টি স্কুলে সরকারি প্রতিনিধিদল পৌঁছানোর রিপোর্ট পেয়ে গিয়েছি। বাকিগুলোর খোঁজ নেব। মোট সাতটি স্কুলে খাবারের মান নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। আমি সেই স্কুলগুলিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শো-কজ) দেব।’’
চণ্ডীতলা-১ ব্লকের বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস এদিন ব্লকের রেশন দোকান, বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও স্কুলগুলি পরিদর্শন করেন। হরিপুরের উত্তরপাড়া এলাকার একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলে স্থানীয় ক্লাবে। ওই কেন্দ্রের কর্মীরা অভিযোগ করেন, ‘‘কেন্দ্রে কোনও শিক্ষিকা নেই। কিন্তু ৩০টি বাচ্চা আছে। তাই বাচ্চারা টিফিন নিয়ে বাড়ি চলে যায়। কিন্তু পড়াশোনা হয় না।’’ বিডিও তাঁদের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
অন্যদিকে জাঙ্গিপাড়া ব্লকের কয়েকটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের ব্যক্তব্য, এক দিকে মিড-ডে মিলে সরকারি টাকার পরিমাণ অত্যন্ত কম। তার উপর স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের মিড-ডে মিল চালিয়ে যাওয়াই মুশকিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। জাঙ্গিপাড়া ব্লকের দিলাকাশ পঞ্চায়েতের বিদ্যাগোরি প্রাইমারি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৮। ওই ব্লকেরই আটপুরের কুমার বাজার প্রাইমারি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৩ এবং রাজবলহাটের ত্রিপান প্রাইমারি স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ২০। ছাত্র সংখ্যা কম হওয়ায় ওই তিনটি স্কুলে মিড-ডে মিল চালাতে সমস্যায় পড়ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
জেলাসদর পান্ডুয়া ব্লকে এদিন সেখানকার বিডিও স্বাতী চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সারদেশ্বরী কন্যা বিদ্যালয়, পাকড়ি কেদারময়ী হাইস্কুল-সহ ব্লকের মোট ২০টি হাইস্কুল এবং ২২টি প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শন করেন সরকারি প্রতিনিধিরা।