(বাঁ দিকে) বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকি (ডান দিকে)।
আফগানিস্তানের তালিবান সরকার ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে চায়। এমনটাই জানিয়েছেন আফগানিস্তানের কার্যনির্বাহী বিদেশমন্ত্রী মাওলাই আমির খান মুত্তাকি। গত কাল রাতে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর সঙ্গে দুবাইয়ে বৈঠক করেছেন তিনি। তার পরে মুত্তাকি জানিয়েছেন, ভারত আফগানিস্তানের ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সহযোগী’। আফগানিস্তানের দিক থেকে কোনও দেশেরই কোনও বিপদের সম্ভাবনা নেই বলেও মুত্তাকি ভারতের বিদেশ সচিবকে ‘আশ্বাস’ দিয়েছেন। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর কথাও বলেছেন তালিবান সরকারের কার্যনির্বাহী বিদেশমন্ত্রী।
আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালিবান রাজত্ব প্রতিষ্ঠার পরে এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার ও তালিবানের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ স্তরের বৈঠক। এত দিন পর্যন্ত আফগানিস্তানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব জে পি সিংহই তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। বিদেশমন্ত্রী স্তরে তালিবানের সঙ্গে ভারতের শেষ বৈঠক হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে। সে সময় বিদেশমন্ত্রী জশবন্ত সিংহ তালিবান সরকারের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী ওয়াকিল আহমেদ মুত্তাওয়াকিলের সঙ্গে কান্দাহারে বৈঠক করেছিলেন। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের অপহৃত বিমানের কর্মী ও যাত্রীদের মুক্তির বিনিময়ে তালিবানের হাতে তিন জন সন্ত্রাসবাদীকে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
ভারত অন্যান্য দেশের মতো তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তার বদলে সব পক্ষকে নিয়ে সকলের জন্য আফগানিস্তানে সরকার গঠনের ডাককে সমর্থন জানিয়েছে। একই সঙ্গে, ভারত কূটনৈতিক স্তরে তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। যাতে ভারতের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তার দিকে কোনও সমস্যা না হয়।দুবাইয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে তালিবানের এই বৈঠক পাকিস্তানের রক্তচাপ বাড়াবে বলে কূটনীতিকরা মনে করছেন। কারণ পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তানের মাটি থেকে পাকিস্তানে একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। আফগানিস্তানের তালিবান তা অস্বীকার করে এসেছে। ডিসেম্বরের শেষে পাকিস্তানের বায়ুসেনা আফগানিস্তানে হানা দিয়েছিল। ভারত সম্প্রতি তার নিন্দা করেছে।
মিস্রী-মুত্তাকির বৈঠকের পরে আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বৈঠকে ইরানের চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে। পাকিস্তানের করাচি ও গদর বন্দর এড়িয়ে ভারত চাবাহার বন্দরকে কাজে লাগাতে চায়। নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, দুবাইয়ের বৈঠকের পরে ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি, আফগানিস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পে যোগ দেওয়ার কথা খতিয়ে দেখছে। তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও ভারতের একটি ছোট্ট কূটনৈতিক দল কাবুলে রয়েছে। মূলত বাণিজ্যিক সম্পর্ক, মানবিক সহায়তার কাজকর্ম দেখভালের জন্য।