বিক্ষোভ: কম রেশনের প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ পুড়শুড়ায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
রেশনে কম চাল-আটা দেওয়ার অভিযোগকে ঘিরে হুগলির নানা প্রান্তে গ্রাহক-অসন্তোষ লেগেই রয়েছে। জেলা খাদ্য দফতর ইতিমধ্যে কয়েকজন ডিলারকে সাসপেন্ড এবং শোকজ়ও করলেও গ্রাহকদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। রবিবার সকালে একই অভিযোগে পুরশুড়ার চিলাডাঙি পঞ্চায়েতের হারুয়ার এক রেশন ডিলারকে মারধর এবং তাঁর বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল গ্রাহকদের বিরুদ্ধে। পুলিশ, ব্লক প্রশাসন এবং খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা গিয়ে ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দেওয়ার পরও বিক্ষোভ থামেনি। অবরোধ হয়। লকডাউনের মধ্যে ওই জমায়েত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শেষে পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ গিয়ে লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
রাজকুমার বাগ নামে ওই ডিলারকে শোকজ় করা হয়েছে জানিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। রেশন সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি থাকলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ লাঠি চালানোর কথা মানতে চাননি এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস। তিনি বলেন, “পুরো বিষয়টা মহকুমা প্রশাসন এবং খাদ্য দফতর দেখছে। সরকারি এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় পুলিশ দু’জন বিশৃঙ্খলাকারীকে গ্রেফতার করেছি।”
গ্রাহকদের কম চাল-গম দেওয়ার অভিযোগ মানেননি ওই ডিলার। তাঁর দাবি, ‘‘মাল কম দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। শাসকদলের কয়েকজন নেতার দাবি মেটাতে অস্বীকার করাতেই এমন হামলা হল।’’ ব্লক রেশন ডিলার সংগঠনের সম্পাদক শক্তি দে বলেন, “যদি সত্যি কেউ কম জিনিস দেন, প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক। সংগঠন তাতে জড়াবে না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাসকদলের নেতাদের চাওয়া-পাওয়াকে কেন্দ্র করে গোলমাল হচ্ছে।’’
এই অভিযোগ নিয়ে হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “রেশন সংক্রান্ত বিষয়ে মানুষের অভিযোগ থাকলে প্রশাসনকে জানান। প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে। রেশন সংক্রান্ত ব্যাপারে আমাদের দলের কাউকে জড়াতে নিষেধ করা হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রেশন থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া চলছিল। ৮টা নাগাদ জনা ৫০-৬০ গ্রাহক এসে দাবি করেন, তাঁদের চাল-গম-আটা ওজনে কম দেওয়া হয়েছে। তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদেরও সে কথা জানাতে উত্তেজনা ছড়ায়। তারপরেই মারধর, ভাঙচুর শুরু হয়।
করোনা-বিপর্যয়ে উপভোক্তাদের নিখরচায় চাল-আটা-গম দেওয়া হচ্ছে। সরকারি ভাবে পরিমাণও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবু জেলার নানা প্রান্তে কম চাল-গম দেওয়া নিয়ে ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে প্রতিদিনই। আরামবাগ মহকুমায় ইতিমধ্যে প্রায় ১৫টি বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। পুরশুড়ায় এই নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বড় অশান্তি হল। বিডিও অচিন্ত্য ঘোষ জানান, আগের কয়েকটি ছোট অশান্তি মেটানো হয়েছে। যাঁদের জিনিস কম দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সেই রাতেই ডিলারকে দিয়ে বকেয়া খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়।