প্রতীকী ছবি।
করোনা আতঙ্কে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরগুলো অধিকাংশই বাতিল হয়েছে। মাঝে মধ্যে কোথাও হাতে গোনা শিবির হলেও সেখান থেকে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ইউনিটের বেশি রক্ত মিলছে না। ফলে, এখন আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে দৈনন্দিন রক্ত পেতে নিজেদের জোগাড় করা রক্তদাতাই ভরসা রোগীদের।
লকডাউনের আবহে রোগীদের আত্মীয়-স্বজনরাও অনেক সময় রক্ত দিতে আসতে রাজি হচ্ছেন না। যেমন গত মঙ্গলবারই রক্ত নেওয়ার নির্দিষ্ট দিন থাকলেও ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত পায়নি খানাকুলের গোবিন্দপুর গ্রামের বছর তেরোর থ্যালাসেমিয়া রোগী উমা দলুই। প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজনরা কেউ রাজি হননি রক্ত দেওয়ার জন্য আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে যেতে। বাধ্য হয়ে উমার বাবা দিনমজুর শ্রীমন্ত দলুই ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করে রক্তের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন।
গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকেই রক্ত সঙ্কট চলছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্কে। এই সঙ্কট কাটাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষের কাছে আবেদনও রেখেছেন। হাসপাতালে এসে রক্তদান করার জন্য তিনতলার প্রেক্ষাগৃহের সরঞ্জাম সরিয়ে একসঙ্গে ৬ জন যাতে রক্ত দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা হয়েছে। এপ্রিলের গোড়ায় পুলিশ প্রশাসন থেকেও রক্তদানের ব্যবস্থা করা হয়। সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশ কর্মী এবং কিছু ক্লাবের রক্তদানে সপ্তাহ দুই রক্তের সঙ্কট কিছুটা কেটেছিল। সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০ ইউনিটের বেশি রক্ত মজুত থাকছিল বলে জানিয়েছিলেন হাসপাতাল সুপার সিদ্ধার্থ দত্ত। কিন্তু এখন ফের শুরু হয়েছে সঙ্কট।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য সময় মহকুমা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রতিদিন গড়ে রক্তের জোগান থাকত প্রায় ৪০০ ইউনিটের কাছাকাছি।
ব্লাড ব্যাঙ্কটির উপর নির্ভরশীল মহকুমা হাসপাতাল এবং একই চত্বরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা ছাড়াও মহকুমার প্রায় ৫০টি নার্সিংহোম। মহকুমা সংলগ্ন হাওড়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, ও দুই মেদিনীপুরের কিছু অংশের রোগীরা এই ব্লাড ব্যাঙ্কের উপর ভরসা করেন।
শুধু আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালেই প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগী রক্তের জন্য ভর্তি হয়। আরও একটা সমস্যা হল, শিবির থেকে যে রক্ত মিলছে, সেগুলির মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ‘বি পজেটিভ’ গ্রুপের রক্ত। হাসপাতাল সুপার সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, “প্রতিদিন ন্যূনতম ৫০ ইউনিট রক্ত থাকলেও সামলানো যেত। কিন্তু গড়ে ২০ ইউনিট করে থাকছে।”