ফাইল চিত্র
প্রস্তুতি শেষের পথে।
সকালের প্রাণ জুড়ানো বাতাসে ভেসে আসবে ভৈরবী রাগ। গায়কের কণ্ঠে শোনা যাবে— ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। চোখের সামনে ফুটে উঠবে ‘রক্তকরবী’র দৃশ্য।
সবই হবে। তবে আর পাঁচটা পয়লা বৈশাখের মতো এ বরা সশরীরে উপস্থিত থেকে তা দেখার উপায় থাকবে না। কারণ, মঙ্গলবার, বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রভাতে বঙ্গের দুয়ার থাকছে আঁটা (লকডাউন)। তাই প্রযুক্তিই ভরসা হুগলির বহু সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সংস্থার। অতএব, নববর্ষের উৎসব হবে অনলাইনে। লকডাউন বজায় রেখেই পালিত হবে বঙ্গ ক্যালেন্ডারের প্রথম পার্বণ।
হুগলির চুঁচুড়া আবৃত্তি সংস্থা (চুঁয়াস) গত ৩৭ বছর ধরে বর্ষবরণ উদ্যাপন করে আসছে। কখনও তা অনুষ্ঠিত হয়েছে গঙ্গার পাড়ে। কখনও স্কুলের মাঠে। গান-কবিতা-আবৃত্তি-শ্রুতিনাটক-নাটক-নাচে অন্যরকম সকাল উপহার দিয়েছেন সংস্থার শিক্ষার্থী বা প্রশিক্ষকরা। এ বারও একটু একটু করে তারই মহলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু লকডাউন ঘোষণার পরেই সংস্থার তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অনুষ্ঠান হবে অনলাইনে।
সংস্থার অধ্যক্ষ, বর্ষীয়ান সাংস্কৃতিক কর্মী উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় জানান, এ বার প্রায় সব অনুষ্ঠানই হবে একক। শিল্পীরা নিজেদের বাড়িতেই মহলা দিচ্ছেন। কেউ বাড়ির ছাদে, কেউ বাগানে, কেউ বা গঙ্গার ধারে। অনলাইনে ভিডিয়ো-কলের মাধ্যমে সবাই তা দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘বহুকাল ধরেই বাংলায় এই দিনটি উদ্যাপিত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের কর্তব্য।’’ সংস্থার সহ-সভাপতি শুভেন্দু দে কর্মসূত্রে দিল্লিবাসী। সেনাবাহিনীর চাকুরে শুভেন্দুবাবু নিজের কোয়ার্টারে কার্যত স্টুডিয়ো খুলে ফেলেছেন। সেখানেই ওই ভিডিয়ো এবং নৈসর্গের নানা ছবির মিশ্রণ হচ্ছে। উৎপলবাবু বলেন, ‘‘রবিবার সবটা হয়ে যাবে। মঙ্গলবার, অর্থাৎ নববর্ষে সকাল ৬টা থেকে ঘণ্টা দু’য়েকের ওই অনুষ্ঠান আমাদের ওয়েবসাইটে সম্প্রচার করা হবে।’’ তিনি জানান, স্তোত্রপাঠ, ভৈরবী রাগের উপরে রবীন্দ্রসঙ্গীত, আবৃত্তি, গল্পপাঠ, নাচ সবই থাকবে। ‘রক্তকরবী’ নাটকের অংশবিশেষও থাকছে।
গত বছর রিষড়ার বিভিন্ন সংগঠন মিলিত ভাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করেছিল শহরের একটি মাঠে। তাতে কচিকাঁচা থেকে কয়েকশো মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। এ বার ওই অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে, ‘আবৃত্তির আলোকে’, ‘নেতাজি জনকল্যাণ সমিতি’, ‘প্রয়াস সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এবং ‘রিষড়ার কথা’ নামে শহরের চারটি সংগঠনের সদস্যেরা সেই অনুষ্ঠানের ছোঁয়া দিতে ফেসবুকের আশ্রয় নেবেন। তাঁরা জানান, মঙ্গলবার সকালে তাঁরা ফেসবুকে অডিয়ো লাইভ করবেন। গান, আবৃত্তির পাশাপাশি থাকবে প্রভাতী আড্ডা। সেখানে উঠে আসতে পারে চড়ক থেকে গাজন, হালখাতা থেকে মিষ্টিমুখ-সহ নানা প্রসঙ্গ। করোনা এবং লকডাউনের পরিস্থিতির কথাও আসবে ঘুরে-ফিরে।
শ্রীরামপুরের সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্র ‘সুরাঙ্গন অভিজ্ঞান’ শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতার ভিডিয়ো বা অডিয়ো একত্রিত করে ওই সকালে ফেসবুকে পোস্ট করবেন। থাকবে একক নৃত্যও। সংগঠনের সম্পাদক হারাধন রক্ষিত বলেন, ‘‘যে যাঁর বাড়ি থেকেই নিজের অনুষ্ঠান রেকর্ড করে আমাদের পাঠাচ্ছেন। উপায় যখন নেই, তখন যে ভাবে সম্ভব সেই ভাবেই উৎসব পালন করতে হবে। ফেসবুকের অনুষ্ঠানকে বৈঠকী মেজাজ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে, গঙ্গাপাড়ে বা মঞ্চের সরাসরি অনুষ্ঠানের আমেজ অনলাইনে কতটা মিলবে, বলা কঠিন। অবশ্য, এই পরিস্থিতিতেও যে উৎসবের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ছে না, এটাই বড় কথা।’’
পয়লা বৈশাখের প্রাক্কালে অনলাইন মহলায় আড্ডাও জমছে। প্রবীণ সাংস্কৃতিক কর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে বৈঠকী গান, পুরাতনী গান, আধুনিক বা টপ্পা গানের রমরমার যুগের কথা। কেউ কেউ দু’কলি শুনিয়েও দিচ্ছেন।