শ্রমজীবী হাসপাতালে ঠাঁই হল না
ICU Bed

আইসিইউ শয্যা ভরে উঠছে হুগলিতে, উদ্বেগ

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, হুগলিতে চারটি কোভিড হাসপাতালে মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা ৫৩টি। তার প্রায় সবই ভর্তি। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে পরিকাঠামো বাড়ানো হবে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০ ০১:০৯
Share:

সংগৃহীত চিত্র।

চণ্ডীতলার নার্সিংহোমে ভর্তি মশাটের এক মহিলার করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। তাঁকে বুধবার সকলে আইসিইউ-যুক্ত কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। পরিজনেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, শ্রীরামপুর শ্রমজীবী এবং ডানকুনির কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা বাড়ন্ত। অগত্যা তাঁকে নিয়ে যেতে হল দূরে, আরামবাগের কোভিড হাসপাতালে। সেখানেও আইসিইউ শয্যা কার্যত ভর্তি।

Advertisement

মানুষের অসতর্কতায় বঙ্গে পুজোর পরে করোনার ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। সে ক্ষেত্রে সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে চিকিৎসার সুযোগ কতটা মিলবে, তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তবে পুজোর আগেই হুগলি জেলায়, বিশেষত আইসিইউ শয্যার অভাব চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ বাড়াতে শুরু করেছে। আইসিইউ শয্যা না-থাকায় এ দিন শ্রমজীবী হাসপাতাল থেকেও দু’জনকে আরামবাগের কোভিড হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, করোনার ক্ষেত্রে প্রায় ৮০% সংক্রমিতকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা যাচ্ছে। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। ৬% সংক্রমিতের ক্ষেত্রে আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। হুগলিতে সুস্থতার হার ভালই বলে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি। তা সত্বেও হাসপাতালে বিশেষত আইসিইউ শয্যার অভাব মোটেই স্বস্তিদায়ক নয় বলে চিকিৎসকদের অনেকে মনে করছেন। তার উপরে কেরলের ওনাম উৎসবের মতো এখানেও পুজোর পরে সংক্রমণ কয়েক গুণ বাড়লে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন।

Advertisement

পরিস্থিতি যাতে উদ্বেগজনক জায়গায় না পৌঁছয়, সে জন্য চিকিৎসকেরা সরব হচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের তরফেও প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ যে ভাবে বাজারে কেনাকাটা করতে ভিড় করছেন, সেই ধারা যদি পুজোতেও বজায় থাকে, তা হলে পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা।

হুগলিতে সংক্রমণ ১৫ হাজারে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর প্রকাশিত বুলেটিনে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ২২৪ জন। অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। মঙ্গলবার ওই সংখ্যা ছিল ১৫২২ জন। আগের দিনের তুলনায় তা ৮৮ জন বেশি।শেওড়াফুলির বর্ষীয়ান চিকিৎসক দীপ্তেন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অবাক লাগছে, শিক্ষিত মানুষ যে ভাবে বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, তা দেখে। আনন্দের চোটে মাস্ক পরতেও বহু মানুষ ভুলে যাচ্ছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘অপেক্ষাকৃত কম বয়সিদের হয়তো তেমন সমস্যা হবে না। কিন্তু যাদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে বা বয়স হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। আগামী দিনে সেই শয্যাই যদি না থাকে, তা হলে কিন্তু বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, হুগলিতে চারটি কোভিড হাসপাতালে মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা ৫৩টি। তার প্রায় সবই ভর্তি। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে পরিকাঠামো বাড়ানো হবে।তবে, চিকিৎসকদের অনেকে মনে করছেন, শয্যা বাড়ালে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও বাড়াতে হবে। না হলে লাভ হবে না। কিন্তু এমনিতেই যেখানে চিকিৎসকের ঘাটতি, সেখানে তেমন পরিস্থিতি হলে কী ভাবে তা সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। তার উপরে স্বাস্থ্যকর্মীরাও সংক্রমিত হচ্ছেন।এই পরিস্থিতিতে সচেতনতার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন চিকিৎসক এবং প্রশাসনের কর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement