প্রতীকী ছবি।
ক’টা দিন মর্ত্যে কাটিয়ে কৈলাসে ফিরেছেন উমা। কিন্তু দেবীর বাপের বাড়িতে থাকার সময়েও করোনা সংক্রমণের অধোগতির লক্ষণ ছিল না হুগলিতে।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ষষ্ঠী থেকে দশমী— পাঁচ দিনে সংক্রমিত হয়েছেন ১০০৯ জন। গড়ে দৈনিক ২০১.৮% জন। গত ১৭ থেকে ২৬ তারিখ অর্থাৎ দশমী পর্যন্ত ১০ দিনের হিসেব করলে সংক্রমিতের সংখ্যা ১৯২৯ জন (দৈনিক গড় ১৯২.৯% জন)।
ঠিক এক মাস আগে, অর্থাৎ গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে সংক্রমিত হয়েছিলেন ১৬০৭ জন (গড়ে প্রতি দিন ১৬০.৭% জন)। তার পরের ১০ দিনে (২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর) সংক্রমিত হয়েছিলেন ১৫৭৪ জন (দৈনিক গড় ১৫৭.৪% জন)। অর্থাৎ, সংক্রমণ বেড়েছে।
দশমীর দিনে অ্যাক্টিভ সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ১৮৯৮। যা আগের কয়েকদিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি। পুজোর মুখে বাজারে কেনাকাটার হিড়িক দেখে চিকিৎসকেরা প্রমাদ গুনেছিলেন। পুজোয় মানুষের ঢল নামলে সংক্রমণের রেখচিত্র অনেকটাই ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে, চিকিৎসকদের সতর্কবাণী, বিভিন্ন সংগঠনের প্রচার, সর্বোপরি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ এবং পুলিশ-প্রশাসনের চেষ্টাচরিত্রে পুজোর ভিড়ে অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে বলে সকলেই মানছেন। সমাজের বড় অংশের এই সচেতনতা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনের কর্তারা। তবে, আরও কয়েকটি দিন না গড়ালে স্বাস্থ্যকর্তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘স্বাভাবিক ভিড় হলে সংক্রমণ কোথায় পৌঁছত বলা মুশকিল। সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ট্রেনের মতো গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ভিড় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। আশা করছি, এর সুফল মিলবে। সংক্রমণ মাত্রা ছাড়াবে না। কয়েক দিনেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’’
চিকিৎসকদের বক্তব্য, মানব শরীরে কোভিড ভাইরাস প্রবেশের পরক্ষণেই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, এমনটা নয়। অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পায় দিন পাঁচেক পরে। তার পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ফলে, পুজোয় যে অংশের মানুষ বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে রাস্তায় বেরোলেন, তাঁরা কতটা সংক্রমিত হলেন, নভেম্বরের শুরুতেই তা বোঝা যাবে।
চিকিৎসক কুণাল দত্তের কথায়, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ, প্রশাসনের অবস্থান এবং বিবেকের তাড়নায় বড় অংশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা দেখা গিয়েছে। এটা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তবে প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝতে দিন সাতেক সময় লাগবে।’’
চিকিৎসকেরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, দুর্গাপুজো মিটলেও সতর্কতার রাশ আলগা করা চলবে না। মাস্ক না-পরে বাইরে বেরনো চলবে না। সামনে কালীপুজো, ছটপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোতেও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, হুগলিতে কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার যে সঙ্কট ছিল, তা এখনও মেটেনি। কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বাড়ির লোকজনও বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
সোমবার ভদ্রেশ্বরের বছর বিয়াল্লিশের এক মহিলার কোভিড ধরা পড়ে চন্দননগরের একটি নার্সিংহোমে। তিনি ভেন্টিলেশনে আছেন। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরের কথা বলেন।
বাড়ির লোকেদের বক্তব্য, তঁরা শ্রমজীবী কোভিড হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আইসিইউ শয্যা নেই। তাঁরা করোনা রোগীদের সাহায্যার্থে গড়ে ওঠা সংগঠন কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ওই সংগঠনের তরফে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত কোভিড-হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা না হচ্ছে, ততক্ষণ যেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা চালিয়ে যান।
রোগিণীর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘কোথায় নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাব, নাকি প্রশাসন ব্যবস্থা করবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’