চুঁচুড়া ইমামবাড়া জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
এ পর্যন্ত হাওড়ায় কারও শরীরে নোভেল করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। কিন্তু জেলায় যাতে ওই মারণ ভাইরাস না-ছড়ায় সে জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলায় গত ১৫ দিন ধরে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ (সন্দেহজনক কাউকে বাড়িতেই পরিবারের অন্য লোকেদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা) ব্যবস্থা চালু হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত বিদেশ থেকে আগত ১৩০ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’-এ রাখা হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, ওই ১৩০ জনের কারও শরীরেই ওই ভাইরাসের উপসর্গ মেলেনি। ২৮ দিনের মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকা কারও শরীরে সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে হবে। ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ কাউকে কী ভাবে রাখতে হবে, সে প্রশিক্ষণও স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে দেওয়া হচ্ছে।
হাওড়া জেলা হাসপাতাল, সত্যবালা আইডি হাসপাতাল এবং উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল— এই তিন জায়গায় আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। সন্দেহজনক উপসর্গ অর্থাৎ জ্বর, সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ স্থানীয় হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে নজরদারি করার ব্যবস্থা থাকছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিশীথ মণ্ডল বলেন, ‘‘মানুষ অযথা আতঙ্কিত না হয়ে যাতে সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন, সেটা দেখাই আমাদের উদ্দেশ্য। চিকিৎসার পরিকাঠামো নিয়ে আমরা ওই ভাইরাসজনিত রোগের মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি।’’
জেলা জুড়ে প্রচারও চালানো হচ্ছে। হাত না ধুয়ে যাতে মুখে-নাকে লাগানো না হয়, যদি কারও কাশি হয়, তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময়ে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, ভিড়ের মধ্যে কাশি হচ্ছে এমন কোনও মানুষ থাকলে মাস্ক পরে নেওয়ার নিদান দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্কুলে, বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় সভা করে এগুলি প্রচার করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টারও মারা হচ্ছে। বিলি করা হচ্ছে হ্যান্ডবিল।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং প্যাথলজিক্যাল কেন্দ্রগুলির মালিকদের নিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, সন্দেহজনক উপসর্গ নিয়ে যদি কেউ কোনও পরীক্ষা বা চিকিৎসা করাতে আসেন, তা হলে যেন সেই রোগীর ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিয়ে নেওয়া হয়। তারপরে সেই ঠিকানা এবং ফোন নম্বর সংশ্লিষ্ট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানিয়ে দিতে হবে। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই ওই রোগীর উপরে নজরদারি করা হবে। প্রয়োজনে তাঁকে বাড়ি থেকে এনে রাখা হবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে। বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল কেন্দ্রগুলিকে সন্দেহজনক উপসর্গ নিয়ে কেউ কোনও পরীক্ষা করাতে এলে তা করতেও নিষেধ করা হয়েছে। বদলে তাঁকে পাঠাতে হবে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অথবা তাঁর ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিয়ে তা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই ওই রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নেওয়া হবে।