Coronavirus

করোনা-যুদ্ধে জয়ী মা, সাক্ষী নবজাতক

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ১ এপ্রিল থেকে ফুলেশ্বরের সঞ্জীবন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা শুরু হয়। গত ১২ এপ্রিল ওই প্রসূতির করোনা ধরা পড়ে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০২:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

হাসপাতাল জুড়েই একটা ‘আমরা করব জয়’---গোছের পরিবেশ ছিল। করোনা পজ়িটিভ এক প্রসূতির প্রসব ঘিরে তেমনই মানসিকতা ছিল হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মী— সকলেরই। শেষ পর্যন্ত করোনার বিরুদ্ধে তাঁরাই জিতলেন। প্রসূতি শুধু নিরাপদে সন্তানের জন্মই দিলেন না, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে পুত্রসন্তান নিয়ে বাড়িও ফিরে গেলেন।

Advertisement

শুক্রবার বিকেলে ১২ দিনের ছেলেকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান ওই তরুণী। রাজ্যের করোনা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল কোভিড মানেই মৃত্যু নয়।’’

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ১ এপ্রিল থেকে ফুলেশ্বরের সঞ্জীবন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা শুরু হয়। গত ১২ এপ্রিল ওই প্রসূতির করোনা ধরা পড়ে। পরের দিন তাঁকে ওই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। ১১ মে ছিল ওই তরুণীর সম্ভাব্য প্রসবের দিন। কিন্তু দিন এগিয়ে আসতে পারে অনুমান করে তাঁকে অত্যন্ত গুরুত্ব-সহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। শুরু হয় করোনার চিকিৎসা। পাশাপাশি কার্ডিও টোকোগ্রাফি যন্ত্রের মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর উপরেও চলে নজরদারি। গত ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় আচমকাই প্রসবযন্ত্রণা শুরু হলে চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন মহিলার সাধারণ ডেলিভারি করাতে হবে। ওই রাতেই তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালের অধিকর্তা চিকিৎসক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘বাচ্চা জন্মের সময়ে যাতে কোনও ভাবেই মায়ের সংর্স্পশে এসে সংক্রমিত না হয় তার জন্য ওই মহিলার শরীরের উপরের অংশ সম্পূর্ণ সুরক্ষা বলয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল।’’ সাবধানতা অবলম্বন করে মা ও শিশুকে একটি আলাদা ঘরে রাখা হয়। মেডিক্যাল অধিকর্তা চিকিৎসক ডালিয়া মিত্র, নিওনেটোলজিস্ট উর্মিলা পিল্লাই রায়, স্ত্রী রোগ চিকিৎসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি মেডিক্যাল বোর্ড চিকিৎসার দায়িত্বে থাকেন। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মায়ের থেকে ছয় ফুটেরও বেশি দূরত্বে রাখা হত সদ্যজাতকে। শুধুমাত্র স্তন্যপান করানোর সময়ে মায়ের কাছে দেওয়া হত শিশুটিকে। সেই সময়ে মাস্ক ছাড়াও মাকে গ্লাভস, চশমা, মাথায় টুপি পরানো হত।

Advertisement

স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পরামর্শ মতো পাঁচ দিন বয়স হতেই গত ২৫ এপ্রিল শিশু এবং মায়ের লালারসের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়। ২৭ এপ্রিল দু’জনেরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আরও নিশ্চিত হতে ২৮ এপ্রিল ফের দু’জনের পরীক্ষা করা হলে আবারও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তখনই দু’জনকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে করোনাজয়ী ওই তরুণীর অনুরোধে ডালিয়াদেবী শিশুটির নাম রাখেন আরমান। ওই মহিলা বলেন, ‘‘যখন চিকিৎসকেরা বললেন ছেলে হয়েছে তখন আনন্দ হলেও পরে ভয় বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের সবার সহযোগিতায় করোনাকে জয় করতে পেরেছি।’’ আর শুভাশিসবাবু বলছেন, ‘‘করোনার বিরুদ্ধে মানুষের যে যুদ্ধ। মা ও শিশুর সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরা তারই জয়গানের সূচনা করল।’’

তাই শুক্রবার মা ও শিশু বেরনোর সময়ে হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিধায়ক, চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মী-সহ সকলে হাততালি দিয়ে গাইলেন, ‘‘আমি ভয় করব না ভয় করব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement