প্রতীকী ছবি
হাওড়ায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিনদিন বাড়তে থাকায় আরও কড়া পদক্ষেপ করল প্রশাসন। হাওড়া পুরসভার যে সব এলাকা ‘রেড স্টার জ়োন’ বা ‘রেড জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, সোমবার সেখানকার সমস্ত বাজার সকাল ১০টার মধ্যে বন্ধ করে দিল পুলিশ। পাশাপাশি, ওই সব এলাকার প্রতিটি ব্যাঙ্ককেও আপাতত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সব এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে, এ দিন সেই সব এলাকার কয়েকটি ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলেও অধিকাংশই ছিল খোলা। ভিড়ও হয়েছিল যথেষ্ট। ব্যাঙ্কগুলির বক্তব্য, প্রশাসন কোনও নোটিস দেয়নি। তাই ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে উত্তর হাওড়ার সালকিয়া, হাওড়া ময়দান, টিকিয়াপাড়া ও মল্লিকফটকের মতো কিছু এলাকায় করোনা-আক্রান্ত রোগীদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। এ দিন অবশ্য হাওড়া পুরসভার আরও কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে সংক্রমণের খবর আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে মধ্য হাওড়ার শিবপুর থানার দুই পুলিশ অফিসারের করোনা-পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। অন্য দিকে, দক্ষিণ হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন থানাতেও এক পুলিশকর্মীর করোনা সংক্রমণ হয়েছে। তাঁকে গোলাবাড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই থানার আরও তিন জন পুলিশকর্মীকে ডুমুরজলা কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন থানায় করোনা-সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই হাওড়া সিটি পুলিশের কর্মীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এ দিনই শিবপুর পুলিশ লাইন ও শিবপুর ট্র্যাফিক গার্ডের কর্মীদের র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার কুণাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘শিবপুর ও বটানিক্যাল গার্ডেন থানার তিন জন করোনা-পজ়িটিভ। ওই তিন জনের সংস্পর্শে এসেছিলেন, এমন কিছু পুলিশ অফিসার ও কর্মীকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া পুর এলাকার চিহ্নিত ১১টি ওয়ার্ডে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত তিন দিন ধরে ব্যারিকেড দিয়ে, লাইন করিয়ে বাজারে ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু অনেক বাজারে দুপুর পর্যন্ত কেনাকাটা চলছিল। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে বহু মানুষ বেশি বেলায় বাজারে আসছিলেন। ড্রোনের ক্যামেরায় বিষয়টি ধরা পড়ায় এ দিন সকাল ১০টার মধ্যে লাঠি উঁচিয়ে কালীবাবুর বাজার, কদমতলা বাজার বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় ক্রেতাদেরও। রামরাজাতলাতেও একই অবস্থা হওয়ায় গোটা বাজারটিকেই শঙ্কর মঠের মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভিড়ের কারণে চ্যাটার্জিহাটের বাজারটিকেও অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা করেছে পুলিশ।
জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানান, রবিবার বেশি রাতে বৈঠক করে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, বাজারগুলিকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রতিদিন ব্যাঙ্কের ভিতরে ও বাইরের ভিড়কেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না-হলে সংক্রমণ রোখা যাবে না। সেই মতো সিদ্ধান্ত হয়, হাওড়া পুর এলাকার ‘রেড স্টার জ়োন’ ও ‘রেড জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত মোট ১১টি ওয়ার্ডে লকডাউন চলাকালীন ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখতে হবে।
প্রশাসনের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘সংক্রমণ-প্রবণ এলাকাগুলিতে ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখার নির্দেশ কালই দেওয়া হয়েছিল লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজারকে। কিন্তু তার পরেও বহু ব্যাঙ্ক এ দিন খোলা ছিল। এ ব্যাপারে নোটিস না দিয়ে আমরা মুখেই জানিয়েছিলাম। পরিস্থিতি বুঝে কর্তৃপক্ষেরই তো বন্ধ রাখা উচিত ছিল।’’
জেলার সমস্ত ব্যাঙ্কের লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার পি কে ঠাকুর বলেন, ‘‘রাতে আমাকে প্রশাসন থেকে টেলিফোনে ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সোমবার সকাল পর্যন্ত কোনও সরকারি নোটিস আসেনি। তাই ব্যাঙ্কগুলিকেও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া যায়নি।’’