প্রতীকী ছবি।
সরকারি প্রকল্পে কৃষিযন্ত্র কেনার জন্য ভর্তুকির কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল হুগলির এক কৃষিকর্তার বিরুদ্ধে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। এ জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত কৃষিকর্তা বর্তমানে চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত। রাজ্যের কৃষিকর্তাদের সন্দেহ, এর নেপথ্যে ওই কেন্দ্রের কয়েকজন এবং বলাগড় ব্লকের একটি কৃষি সমবায় সমিতির লোকজনও জড়িত।
দীর্ঘদিন ধরেই ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট অফিসার টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে সম্প্রতি বলাগড়ের এক চাষি কৃষি দফতরে অভিযোগ জানান। কৃষি দফতরের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সারবত্তা মেলে। তারপরেই কৃষি দফতরের বর্ধমান রেঞ্জের যুগ্ম অধিকর্তা প্রভাত বসু এবং উপ-অধিকর্তা পার্থ ঘোষকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেন কৃষিমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘‘সদ্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার নেপথ্যে ঠিক কারা রয়েছেন, তা তদন্তসাপেক্ষ। তদন্ত রিপোর্ট পেলে ওই অফিসার-সহ যাঁরা দুর্নীতিতে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে বিধিসম্মত সমস্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।’’
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের জনপ্রিয় প্রকল্প ‘কাস্টম হায়ারিং সেন্টার’-এ মাধ্যমে কৃষিযন্ত্র (ট্রাক্টর, ধান ঝাড়ার যন্ত্র ইত্যাদি) কিনতে পারেন সম্পন্ন চাষিরা। এ জন্য ওই চাষিদের আবেদন করতে হয় কৃষি দফতরে। যন্ত্রের দামের ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হয় চাষিকে। ৩৫ শতাংশ টাকা ঋণ দেয় সমবায় সমিতি। বাকি টাকা (৪০%) ভর্তুকি দেয় রাজ্য সরকার। কৃষি দফতর চাষিদের আবেদন মঞ্জুর করার পরই গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কেনার পরে কৃষিযন্ত্র ভাড়া দেন চাষিরা। সেই ভাড়ার টাকায় তাঁরা সমবায়ের ঋণ পরিশোধ করেন।
২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ওই সরকারি প্রকল্পে অন্তত এক কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয় বলাগড়ের কিছু চাষিকে। ওই ব্লকেরই একটি সমবায় সমিতি মারফত ৩২টি ট্রাক্টর এবং ৯টি ধান ঝাড়ার যন্ত্র কেনা হয়েছে বলে খাতায়-কলমে দেখানো হয়।
কৃষি দফতরে দায়ের হওয়া অভিযোগে জানানো হয়েছে, ওইসব কৃষিযন্ত্রের খাতায়-কলমে থাকা ‘ক্রেতা’রা পরস্পরের আত্মীয়। একটি ছোট এলাকায় অত কৃষিযন্ত্র কোথায় খাটছে আর কত টাকাই বা ভাড়া মিলছে, এমন প্রশ্নও তোলা হয়। কৃষিযন্ত্র কেনার ওই সব আবেদন ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের ওই অফিসারই মঞ্জুর করেছিলেন বলে অভিযোগ।
কৃষি দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের সন্দেহ আদৌ ওই সব কৃষিযন্ত্র কেনা হয়নি। সরকারি ভর্তুকির টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যন্ত্রের ডিলারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুরোটাই সাজানো হয়েছে। এর নেপথ্যে কৃষি দফতরের অফিসার, কৃষি সমবায় সমিতি এবং আগে এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন এমন সম্পন্ন কৃষকেরাও থাকতে পারেন। সবই তদন্ত হচ্ছে।’’