অঙ্গীকারপত্র হাতে গৃহশিক্ষক। —নিজস্ব িচত্র
সরকার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত গৃহ-শিক্ষকতা বন্ধ রাখা হবে, এই মর্মে অঙ্গীকারপত্রে সই করলেন বেশ কয়েকজন গৃহ-শিক্ষক। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ার ঘটনা।
সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, দূরত্ব-বিধিকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এলাকার কিছু 'কোচিং সেন্টার'-এ বহু ছাত্রকে এক সঙ্গে বসিয়ে পড়ানো হচ্ছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার এমনই একটি 'কোচিং সেন্টার'-এ পুলিশ পাঠান বিডিও (উলুবেড়িয়া-১) কার্তিকচন্দ্র রায়। পুলিশ সেই কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি কয়েকজন গৃহশিক্ষকের থেকে অঙ্গীকারপত্রও লিখিয়ে নেওয়া হয়। যেখানে তাঁরা লিখেছেন, ‘যতদিন না সরকার লকডাউন তুলে নিচ্ছে এবং গৃহ-শিক্ষকতার অনুমতি দিচ্ছে, ততদিন গৃহ-শিক্ষকতা বন্ধ রাখিব। এই অঙ্গীকার করছি’।
বিডিও বলেন, “গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়ে কোচিং সেন্টারগুলি বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। কিছুদিন বন্ধও ছিল। ফের চালু হয়েছে জানতে পেরে পুলিশকে তদন্ত করতে বলেছিলাম। পুলিশ শিক্ষকদের থেকে অঙ্গীকারপত্র লিখিয়ে নিয়েছে। এর পরেও 'কোচিং সেন্টার' খোলা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“
উলুবেড়িয়ায় অনেকেই করোনা-আক্রান্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা 'কোচিং সেন্টার' চালুর অনুমতি এখনও প্রশাসন দেয়নি। অভিযোগ, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে কুলগাছিয়ায় বেশ কিছু 'কোচিং সেন্টার' চালু রয়েছে। সে কথা গ্রামবাসীরা জানিয়েছিলেন বিডিও-কে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে কুলগাছিয়ার একটি 'কোচিং সেন্টার'-এ হাজির হয়ে বিস্মিত হয়ে যায় পুলিশ। দেখা যায়, ছোট্ট একটি ঘরে গাদাগাদি করে ছাত্রছাত্রীরা বসে পড়াশোনা করছে। পুলিশকর্মীরা শিক্ষকদের জানান, 'লকডাউন'-এ সরকার স্কুল-কলেজ ও 'কোচিং সেন্টার' বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এরপর গৃহ-শিক্ষকেরা অঙ্গীকারপত্র লিখে প্রশাসনের কাছে জমা দেন।
কুলগাছিয়ার এক বধূর মন্তব্য, “নানা জায়গা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা পাশাপাশি বসে পড়াশোনা করছে। তারাই আবার পাড়ায় অন্যদের সঙ্গে খেলাধুলা করছে। এতে সংক্রমণ বাড়তে পারে।” তাঁর দাবি, “বহুবার 'কোচিং সেন্টার'-টি বন্ধ রাখতে বলা হলেও শিক্ষকেরা শোনেননি।”
ওই 'কোচিং সেন্টার'-এর এক শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া, “গৃহ-শিক্ষকতা করে রোজগার করি। লকডাউন ঘোষণার পরে 'কোচিং সেন্টার' বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেন্টার না চালালে ছাত্রছাত্রীরা বেতন দেবে না। পাঠ্যক্রমও শেষ করা যাবে না। তাই সংসার চালানোর জন্য বাধ্য হয়ে সেন্টার খুলছিলাম।”
আর এক শিক্ষকের দাবি, “কম সংখ্যক পড়ুয়া নিয়ে, দূরত্ব-বিধি বজায় রেখে এবং স্যানিটাইজ়ার দিয়ে পড়ুয়াদের হাত ধোয়ানোর পরে পড়তে বসানো হচ্ছিল। প্রত্যেকে বাড়ি থেকে আসন নিয়ে আসত। পড়ানো শেষ হলে ঘর জীবাণুমুক্ত করা হত। সংক্রামণের আশঙ্কা ছিল না।”