ক্ষতি: ব্যাঙ্কের পাসবই দেখাচ্ছেন নারায়ণীদেবী। নিজস্ব চিত্র
পুরনো টিভি বিক্রির জন্য একটি সংস্থার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন এক মহিলা। ক্রেতা সেজে অনলাইনে টাকা পাঠানোর নামে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সাফ করে দিল সাইবার-প্রতারক। নারায়ণী সাধু নামে চুঁচুড়ার ফটকগোড়ার বাসিন্দা ওই মহিলা টাকা ফেরৎ পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তোলাফটক নন্দীপাড়ার বাসিন্দা নারায়ণী গত বুধবার বিজ্ঞাপন দিয়ে জানান, বাড়ির পুরনো টিভি ২০০০ টাকা বেচে দেবেন। বিজ্ঞাপন দেখে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নাম মলয় ঘোষ। কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। পরিবারের লোকেরা থাকেন নৈহাটীতে। দর-কষাকষি করে টিভির দাম দেড় হাজার টাকা ঠিক হয়। মলয় বলেন, তিনি অনলাইনে ১০০০ টাকা পাঠাবেন। বাকি টাকা পরিবারের নারায়ণীর বাড়িতে নগদে দিয়ে যাবেন।
নারায়ণী জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় মলয় প্রথমে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ টাকা পাঠান। তার পরে হোয়াটসঅ্যাপে ‘কিউআর কোড’ পাঠিয়ে সেটি স্ক্যান করে মোবাইলে আসা পিন পাঠাতে বলেন। নারায়ণী তাই করেন। সেই ‘গোপন’ নম্বর পেয়ে নারায়ণীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয় ওই ব্যক্তি। নারায়ণীর ভুল হচ্ছে জানিয়ে পর পর ১১ বার একই পদ্ধতিতে মোট ৫০ হাজার টাকা তুলে নেয়।
শনিবার সকালে ওই পরিবার বুঝতে পারে, প্রতারকের খপ্পরে পড়েছে।
রবিবার নারায়ণী চুঁচুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। চন্দননগর কমিশনারেটের সাইবার শাখাতেও বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশ জানায়, নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
নিম্নবিত্ত পরিবারের বধূ নারায়ণীর স্বামী ছোটখাট কাজ করেন। মহিলার আক্ষেপ, ‘‘অভাবের সংসারে তিল তিল করে জমানো টাকা প্রতারক বোকা বানিয়ে তুলে নিল। প্রতারকের ভাল ভাল কথায় মনে একটু সন্দেহ আসেনি। পুরনো টিভি বেচে আর কিছু টাকা দিয়ে নতুন একটা টিভি কিনব ভেবেছিলাম। সেটা তো হলই না। উল্টে
সর্বনাশ হল।’’
সাইবার শাখার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ জন্য মানুষের অসতর্কতাকেই দায়ি করছেন তাঁরা। কোথায় ভুল? সাইবার-বিশেষজ্ঞরা জানান, টাকা পাঠানোর জন্য ‘কিউআর কোড’ স্ক্যান করতে হয়। টাকা পাওয়ার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। মোবাইলে ‘কিউআর কোড’ এলে তাতে পরিষ্কার লেখা থাকে সেটি স্ক্যান করলে কত টাকা কাটা হবে। স্ক্যানের পরে ‘পিন’ নম্বর দিতে হয়। টাকা পেতে হলে নিজের পিন নম্বর দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এটাও মানুষ ভুলে যান।
কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এতগুলো ভুল করে প্রতারককে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। লাগাতার প্রচার সত্বেও মানুষ সতর্ক হচ্ছেন না। তাতেই
অনর্থ ঘটছে।’’