প্রতীকী ছবি
ডাকঘরের মাধ্যমে চুঁচুড়া থেকে এক ব্যক্তির পাঠানো টাকা পাশের জেলা হাওড়ায় পৌঁছতে সময় লেগেছিল দু’মাস। এর ফলে তাঁকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ ব্যাপারে গাফিলতির দায়ে ডাকঘর কর্তৃপক্ষকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যান। কিছু দিন আগে ওই আদালত ডাকঘরের আবেদন খারিজ করে জরিমানার অঙ্ক পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দেয়। সোমবার অবশেষে সেই জরিমানা মেটাল ডাকঘর।
বিচার পেয়ে খুশি শশধর পণ্ডা নামে চুঁচুড়ার বড়বাজারের ওই বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লির আদালতে আমি ছিলাম না। নথি দেখে বিচারকের এমন রায়ে আমি কৃতজ্ঞ।’’
সত্তরোর্ধ্ব শশধরবাবু হুগলি মহসিন কলেজে সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৪ সালের ৭ মে তিনি চুঁচুড়া মুখ্য ডাকঘর থেকে হাওড়ার শ্যামপুরে এক আত্মীয়কে ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার করে এক হাজার টাকা পাঠান। কয়েক দিন পরে ওই আত্মীয় জানান, টাকা পৌঁছয়নি। শশধরবাবু ডাকঘরে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, টাকা শীঘ্রই পৌঁছে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। ডাকঘরের উত্তর হুগলি ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডেন্টকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানালেও ফল হয়নি।
শশধরবাবু বলেন, ‘‘টাকা না পৌঁছনোয় ওঁরা আমাকে ভুল ভাবেন। আমাকে প্রতারক বলে চিঠি পর্যন্ত লেখেন। চূড়ান্ত অপমানিত, অসম্মানিত হই। অসুস্থ হয়ে পড়ি।’’ দু’মাস পরে ওই টাকা নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছয়। তবে, ডাকঘরের গাফিলতির জন্য হয়রানি, মানসিক যন্ত্রণার অভিযোগে ২০১৫ সালে শশধরবাবু জেলা ক্রেতা সুরক্ষা ফোরামে মামলা করেন। আদালত জানায়, ডাকঘরের গাফিলতিতেই মানি অর্ডার পৌঁছতে দেরি হয়েছে।
২০১৭ সালের নভেম্বরে আদালত নির্দেশ দেয়, মানসিক যন্ত্রণা এবং হয়রানির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন হাজার, মামলা চালানোর খরচ বাবদ আরও দু’হাজার টাকা শশধরবাবুকে দিতে হবে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য ফোরামে রিভিউ পিটিশন করা হয় ডাকঘরের তরফে। বয়সের কারণে শশধরবাবু সেখানে শুনানিতে যেতে পারেননি। তবে, সেখানে জেলা ফোরামের ওই রায়ই বহাল থাকে।
এর পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় ফোরামে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয় ডাকঘরের তরফে। চলতি বছরের মে মাসে পিটিশন খারিজ করে ওই আদালত ডাকঘরকে নির্দেশ দেয়, শশধরবাবুকে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আরও এক লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে হুগলি জেলা ক্রেতা আইনি পরিষেবা তহবিলে। ডাকঘরের তরফে দাবি করা হয়েছিল, শশধরবাবুর মানসিক যন্ত্রণা, হয়রানির দায় তাদের নয়। আদালতের অবশ্য পর্যবেক্ষণ, ওই দায় তারা অস্বীকার করতে পারে না। ডাকঘর কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে আদালত। রায় ঘোষণার চার সপ্তাহের মধ্যে টাকা মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু, নির্দিষ্ট সময়ে টাকা না মেটানোয় শশধরবাবু ফের জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর আইনজীবী সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ওই আদালত অবিলম্বে জাতীয় ফোরামের নির্দেশ কার্যকর করতে বলে। তা না দেওয়ায় দিন কয়েক আগে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তার পরেই সোমবার ডাকঘরের তরফে ২৫ হাজার এবং ১ লক্ষ টাকার দু’টি চেক জমা দেওয়া হয় ফোরামের সভাপতি শঙ্করকুমার ঘোষের হাতে। আদালতের তরফে ২৫ হাজার টাকার চেকটি শশধরবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
শশধরবাবু বলেন, ‘‘কাগজপত্র দেখেই ফোরামের সভাপতি-সদস্য এস এম কানিতকর এবং সদস্য দীনেশ সিংহ উপযুক্ত রায় দিয়েছেন। ওঁরা আমার মানসিক যন্ত্রণার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।’’