নির্দেশ: চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে এমন পার্কিংয়েই জারি হল নিষেধাজ্ঞা। —নিজস্ব িচত্র
‘সবুজ’ হচ্ছে চন্দননগর স্ট্র্যান্ড।
গঙ্গাপাড়ের ঐতিহ্যের এই শহরকে আরও সুন্দর করে তুলতে নানা পদক্ষেপ করছে চন্দননগর পুরসভা এবং পুলিশ কমিশনারেট। সেই পরিকল্পনা হিসেবেই স্ট্র্যান্ড রোডকে ‘গ্রিন জ়োন’ হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। গোটা স্ট্র্যান্ড এবং পাশের চার্চ রোডে গাড়ি চলাচল, পার্কিং-সহ নানা বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। আগামী শনিবার অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন থেকে যাবতীয় বিধিনিষেধ কার্যকর করা হবে।
পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ সম্বৎসর চন্দননগরে বেড়াতে আসেন। স্ট্র্যান্ড এবং সংলগ্ন এলাকা তাঁদের অবশ্য গন্তব্য। তাই এই চত্বরকে আরও সুন্দর করে মানুষের সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে পরিবেশ আরও নির্মল হবে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘ওখানে পথচারীরা যাতে স্বচ্ছন্দে ঘুরতে পারেন, সে জন্যই যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জায়গাটি যতটা সম্ভব ফাঁকা রাখা হবে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’’
শহরবাসীর অনেকেই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। রত্না গুহমল্লিক নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘স্ট্র্যান্ড চত্বর আমাদের গর্বের জায়গা। ঐতিহ্য বজায় রাখতে এই চত্বর-সহ শহরকে সুন্দর করতে যে পরিকল্পনার কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়িত হলে ভীষণ ভাল হবে।’’
চন্দননগর এক সময় ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে এই শহরে বিভিন্ন স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল। ফরাসি জাদুঘর-সহ ওই সব স্থাপত্যের বেশ কয়েকটি রয়েছে গঙ্গার ধারে। এখানকার স্ট্র্যান্ড এই শহরের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। রানিঘাট থেকে পাতালবাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমাটার বিস্তৃত এই জায়গায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বহু মানুষ আসেন। বয়স্করা প্রাতর্ভ্রমণ করেন। স্ট্র্যান্ডের পাশে রয়েছে স্কুল, কলেজ, থানা, আদালত-সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ভবন। কিন্তু ঘনঘন অনুষ্ঠান, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা-সহ নানা কারণে পথচারীদের অসুবিধায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ। নানা কারণে দৃশ্যদূষণও হয়। এ সবের হাত থেকে স্ট্র্যান্ডকে মুক্ত করতেই পুরসভা এবং কমিশনারেটের আধিকারিকরা চিন্তাভাবনা করছিলেন। সম্প্রতি এ ব্যাপারে একটি রূপরেখা তৈরি করেন তাঁরা।
সোমবার পুর কর্তৃপক্ষের জারি করা এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জায়গাটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে, সাধারণ মানুষের বাধাবিহীন চলাচল, বয়স্কদের প্রাতঃকালীন এবং সান্ধ্যকালীন ভ্রমণ, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই কারণেই পুরসভা এবং পুলিশ কমিশনারেটের তরফে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এটিকে ‘গ্রিন জ়োন’ এবং ‘নো পার্কিং জ়োন’ হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। ওই আদেশনামায় জানানো হয়েছে, স্ট্র্যান্ড রোড এবং চার্চ রোডের ধারে যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। বিকেল সাড়ে চারটে থেকে এই চত্বরে রাত ন’টা পর্যন্ত টোটো চলাচল বন্ধ থাকবে।
স্ট্র্যান্ডে অনুষ্ঠান রুখতে পরিবেশপ্রেমীরা দীর্ঘদিন ধরেই সরব। সম্প্রতি ওই জায়গায় অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ। এই নির্দেশিকাতেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এ বার থেকে বাতিস্তম্ভের উপরে ব্যানার, পোস্টার বা কোনও দল-সংগঠনের পতাকাও লাগানো চলবে না। গঙ্গার ধারে দোকান বা স্টল বসানোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দূষণ রুখতে এলাকায় মোটরচালিত ইঞ্জিনভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শহরের কোথাও ডিজে বক্সও বাজানো যাবে না।
পুরকর্তারা জানিয়েছেন, নিষেধ অমান্য করলে জরিমানা বা অন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সরকারি প্রয়োজনে ওই সব বিধিনিষেধ থাকবে না।