রক্ষক: পরিবেশ অ্যাকাডেমির স্টল। নিজস্ব চিত্র
জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মানুষের আনাগোনা। এলাকার বাসিন্দারা তো বটেই, পরিসংখ্যান অনুযায়ী পুজোর ক’দিন শহরে প্রায় দু-আড়াই লক্ষ বাড়তি মানুষের ভিড় হয়। প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গেই চলে দেদার খাওয়া দাওয়া। কিন্তু তার পর আর ফিরে তাকান না দর্শনার্থীরা। শহর জুড়ে জমা হয় থার্মোকলের থালা, নরম পানীয়ের প্লাসিক বোতল, পলিথিনের প্যাকেট।
এ বার শুরু থেকেই তৎপর প্রশাসন। যাতে পুজো শেষ হওয়ার দিন তিনেকের মধ্যে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া যায় শহরকে। সে জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে নিয়োগ করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া থাকছে চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমি। এ বার তারা ‘সবুজের ঠিকানা’ একটি স্টলও করেছে। সেখান থেকে চলবে সচেতনতা প্রচার।
জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে চন্দননগরের নাম জড়িয়ে থাকলেও মানকুন্ডু, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর এবং চুঁচুড়ার অনেকটা অংশ জুড়েই থাকে পুজোর জৌলুস। গঙ্গা পাড়ের এই শহরেগুলোতে প্রায় আড়াইশো পুজো মণ্ডপ হয়। শুধু পুজো নয়, মণ্ডপ চত্বর মেলার চেহারা নেয়। কোথাও রাস্তার উপরই বসে হরেক রকম খাবরের স্টল। আনন্দের আতিশয্যে ক্রেতা বা বিক্রেতা কেউই নজর দেন না পরিবেশের দিকে। অভিযোগ, এর আগেও পুরসভার তরফে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ মানুষই তা ব্যবহার করেন না। তাঁরা খাবারের পাত্র, জলের বোতল, বাড়তি খাবার, সবই রাস্তায় ফেলে যান। পরে কাক, কুকুর সে সব মুখে করে টেনে ছড়িয়ে দেয় শহরময়।
পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, নিয়মের ধার ধারেন না বহু ব্যবসায়ীই। তাই থার্মোকলের পাত্র ব্যবহার হয় যত্র তত্র। সে সব থার্মোকল নর্দমায় জমে। পুজোর পরে ভেঙে পড়ে শহরের নিকাশি ব্যবস্থাটাই।
পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘এর আগের অভিজ্ঞতা আমাদের খারাপ। পুজোর সময় পুরসভার অন্য সমস্ত বিভাগের কর্মীদের আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে লাগালেও লাভ হয় না। তাই এ বার আমরা প্রশিক্ষিত একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছি। শহরের মূল রাস্তা এবং নিকাশির আবর্জনা তারাই পরিষ্কার করবে।’’
এ ছা়ড়াও চন্দননগরের পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে এমন ২০টি সংস্থা শহরকে আবর্জনামুক্ত রাখতে প্রচার চালাবে পুজোর দিনগুলোতে। প্রতিমা দর্শন করতে এলেই মানুষের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে সচেতনতা মূলক লিফলেট।
পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোর দিনগুলো এবং বিসর্জনেও মানুষ যাতে পরিবেশের বিষয়টি ভুলে না যান, সে জন্য আমরা লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাব। পুর প্রশাসনেও আমরা লিখিত ভাবে একই আবেদন করেছি।’’