মহকুমা অফিস চত্বরে শুক্রবার তৃণমূল প্রার্থী মানস মজুমদারের সমর্থনে কর্মী-সমর্থকদের ধামসা-মাদল নিয়ে আদিবাসী নাচ। ছবি: মোহন দাস।
রাজনৈতিক দলের সভার জন্য বাস তুলে নেওয়ায় ভোগান্তি সাধারণ মানুষের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ বার প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার মিছিলেও একইরকম ভাবে ভুগলেন আরামবাগের মানুষ। সৌজন্যে তৃণমূল।
শুক্রবার হুগলির আরামবাগ ও গোঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। অভিযোগ, দুই প্রার্থীর মিছিলের জন্য কর্মী-সমর্থকদের আনতে তুলে নেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন রুটের অধিকাংশ বাস, ট্রেকার। ফলে দিনভর বাস না পেয়ে ভোগান্তি হল সাধারণ নিত্যযাত্রী থেকে ছাত্রছাত্রীদের। শুধু বাস তুলে নেওয়ার ভোগান্তিই নয়, বিশাল মিছিলের ঠেলায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মহকুমা শহরে যানজটের কবলে পড়েও দুর্ভোগ পোহালেন পথচারীরা। প্রচণ্ড গরমে এ হেন দুর্ভোগে পড়া অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে এরা কী করে ভাল কাজ করবে’!
বিভিন্ন রুটে বাস তুলে নিয়ে এ ভাবে মিছিল করে শহরকে রুদ্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের জোনাল নেতা মোজাম্মেল হোসেনের অভিযোগ, “নিশ্চিত হারের আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়েই তৃণমূলের এই মিছিল। তবে এ সব ওরা করতেই পারে। কিন্তু সমস্ত রুটের বাস তুলে নিয়ে যে ভাবে পুরো মহকুমাকেই অচল করে দেওয়া হল একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। ওরা সাধারণ মানুষের কথা বলে। এ দিন তাহলে কাদের ভোগান্তি হল?’’ তিনি জানান, যে ভাবে তৃণমূল লাগাতর নির্বাচনী বিধি ভেঙে চলেছে সে ব্যাপারে কমিশনকে জানিয়েছি। কংগ্রেস ব্লক সভাপতি প্রভাত ভট্টাচার্য বলেন,“মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তৃণমূল নিজেদেরই বিপদ বাড়াচ্ছে।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, আরামবাগের ২৯০টি বুথ থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আনতে ২৯০টি বাস এ দিন তুলে নেওয়া হয়। গোঘাটের তৃণমূল নেতারা ৫২ টি বাস এবং ১৫০টি ট্রেকার ভাড়া করে মিছিলে যোগ দেন। এ ভাবে সব বাস তাঁরাই বা দিলেন কেন প্রশ্ন করায় বাস মালিক সংগঠন সূত্রে জানানো হয়, তাঁদের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন রুটের বাস তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরামবাগে মিছিলের মূল আয়োজক তৃণমূলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দীর অবশ্য দাবি, “নির্বাচন বিধি কোথাও লঙ্ঘন হয়নি।’’ এ ভাবে বাস তুলে নেওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের কারণে কর্মী-সমর্থকেরা নিজেরাই গাড়ির ব্যবস্থা করে মিছিলে যোগ দিয়েছেন।”
কী বলছেন আরামবাগের মহকুমা শাসক তথা রিটার্নিং অফিসার প্রতুলকুমার বসু?
সব শুনে প্রতুলবাবু বলেন, “আমাদের অফিস চত্বরে কোথায় নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন হয়নি। প্রার্থী সহ মোট ৫ জনের অনুমতি ছিল। সেই নিয়ম মেনেই তাঁরা ঢুকেছেন। মূল ফটকের বাইরে কিছু বিশৃঙ্খলা হলেও সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।” আরামবাগ এমসিসি দফতর সূত্রে খবর, এদিনের জন্য তৃণমূলের ২০ হাজার মানুষের মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে মিছিলে যানবাহন নিয়ে কোনও অনুমতি ছিল না। ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাসে লোক আনা হয়েছে প্রমাণ হলে সেই খরচ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ভোটের খরচের সঙ্গে যোগ হবে।