খুনের অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে
Goghat

বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধারে তপ্ত গোঘাট

দেহ আটকে বিক্ষোভ, পথ অবরোধ, বিধায়কের বাড়ি ঘেরাওয়ের চেষ্টা, পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি চলে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪৫
Share:

উত্তপ্ত: গণেশ রায়ের (ইনসেটে) শোকার্ত পরিবার। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

এক বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় অশান্ত হল গোঘাট রেল স্টেশন সংলগ্ন কয়েকটি এলাকা। দেহ আটকে বিক্ষোভ, পথ অবরোধ, বিধায়কের বাড়ি ঘেরাওয়ের চেষ্টা, পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি, পুলিশের লাঠিচার্জ, তৃণমূল কার্যালয় ভাঙচুর, বিজেপির দলীয় পতাকা-ফেস্টুন নষ্ট করে দেওয়া, চিত্র সাংবাদিকদের উপরে হামলা— কিছুই বাদ গেল না।

Advertisement

এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ রেল স্টেশন সংলগ্ন একটি গাছের ডাল থেকে গলায় গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায় গণেশ রায়(৫২) নামে খানাটি গ্রামের ওই বিজেপি কর্মীর দেহটি দেহতে পান প্রাতর্ভ্রমণে বেরনো কয়েকজন। তাঁরা হাঁটু মোড়া ছিল। পা মাটি স্পর্শ করে ছিল। বিজেপি নেতৃত্ব এবং মৃতের স্ত্রী ছায়া রায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলেন। তবে বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তৃণমূল খুনের অভিযোগ মানেননি। তদন্তের দাবি তুলেছে তারাও।

এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস বলেন, “কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে গলায় ফাঁসের দাগ ছাড়া মৃতের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে দেহটি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।”

Advertisement

মৃতের স্ত্রী জানান, স্বামী খেতমজুরি ছাড়াও গরু বেচাকেনার কাজ করতেন। শনিবার সকালে কাজে বেরিয়ে আর ফেরেননি। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে তৃণমূলের ছেলেরা স্বামীকে ওদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছিল। ও রাজি হয়নি। আমাদের সন্দেহ, ওরাই খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দেয়।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের দাবি, “বিজেপি খুনের রাজনীতি আমদানি করে জমি তৈরির চেষ্টা করছে। ওই বিজেপি কর্মীর মৃ্ত্যুর পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে।’’

সকালে গণেশের অপমৃত্যুর কথা জানাজানি হতেই দলে দলে বিজেপি নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। মৃতদেহ আটকে রেখে তদন্তের দাবিতে স্টেশন এলাকাতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশ সাড়ে ৮টা নাগাদ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। এরপরে বিজেপি কর্মীরা কাছেই বকুলতলা অবরোধ করে। নিট পরীক্ষার কথা জানিয়ে মিনিট কুড়ির মধ্যে পুলিশ অবরোধ হটিয়ে দেয়।

এখানেই শেষ নয়। এর পরে বিজেপি কর্মীরা দু’কিলোমিটার দূরে গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদারের ভাড়াবাড়ি ঘেরাও করার জন্য মিছিল করে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়। বাধা পেয়ে বকুলতলাতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পুলিশ লাঠি চালিয়ে এলাকা ফাঁকা করে।

বকুলতলায় পুলিশ বিজেপির জমায়েত হটিয়েছে, এ খবর পেয়ে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সেখানে হাজির হন। তাঁরা বিজেপির সমস্ত পতাকা-ফেস্টুন খুলে ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ। কয়েকজন বিজেপি নেতাকর্মীর বাড়ি ভাঙা হতে পারে, এ কথা জানাজানি হতে ছবি তোলার চেষ্টা করায় পাঁচ চিত্র সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মধুসূদন দে এবং শেখ নবাব আলি নামে আহত দুই চিত্র সাংবাদিককে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

এর পরে গোলমাল আর ছড়ায়নি। বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে এ দিন বিকেলে দিলীপবাবু আহত সাংবাদিকদের দেখতে হাসপাতালে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘এই হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। পুলিশকে বলেছি, যারা এটা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। দলও ব্যবস্থা নেবে।” চিত্র সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় রাতে পুিলশ দু’জনকে গ্রেফতার করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement