প্রতীকী ছবি।
জোগান বাড়বে কী ভাবে, তা আলোচনার স্তরে। রাজ্যের নানা এলাকার মতোই রক্তাল্পতায় ভুগছে হুগলি জেলার ব্লাডব্যাঙ্কগুলিও।
করোনা পরিস্থিতিতে বাতিল হচ্ছে একের পর এক শিবির। শিবির হলেও রক্ত মিলছে অপেক্ষাকৃত কম। যা পরিস্থিতি, তাতে জেলার সরকারি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে ভর্তি রোগীর রক্তের চাহিদা কোনওক্রমে মিটছে। কিন্তু অন্য হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি রোগীদের তা দেওয়া যাচ্ছে না। রক্ত জোগাড় করতে ওই সব রোগীদের আত্মীয়স্বজনের কালঘাম ছুটছে। পাড় ডানকুনির শেখ ইয়াসিনের পাঁচ বছরের মেয়ে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। রক্তের গ্রুপ ‘এবি পজ়িটিভ’। আগে ইয়াসিন কলকাতায় গিয়ে মেয়েকে রক্ত দিয়ে আনতেন। লকডাউন পর্বে দু’-এক বার চণ্ডীতলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরা রক্ত জোগাড় করে দেন। সম্প্রতি রক্ত দেওয়ার দরকার হলে সেখানে পাননি। শ্রীরামপুর ওয়ালশ এবং শ্রমজীবী হাসপাতালেও মেলেনি। দিন কয়েক অপেক্ষার পরে ওয়ালশে রক্ত পান। কিন্তু শিশুর শরীরে কোনও কারণে ওই রক্ত দেওয়া যায়নি। পরে ইয়াসিন ওই হাসপাতালে রক্ত পাননি। বুধবার কলকাতায় গিয়ে রক্ত পায় শিশুটি।
কেন এই পরিস্থিতি? বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রের বক্তব্য, অনেক ক্লাব-সংগঠন শিবির আয়োজন করেও করোনা পরিস্থিতির কারণে বাতিল করছে। যে শিবির হচ্ছে, সেখান থেকে পর্যাপ্ত রক্ত আসছে না। এই পরিস্থিতিতে ভাঁড়ারে টান পড়ছে। ওয়ালশ হাসপাতালে গত শনি ও রবিবার দু’টি শিবির বাতিল হয়েছে। শ্রমজীবীতে শনিবার পাঁচটি শিবির থেকে প্রায় আড়াইশো ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হয়। ইতিমধ্যেই তা কার্যত শেষ। নেগেটিভ গ্রুপ তো বটেই, ‘এ পজ়িটিভ’, ‘ও পজ়িটিভ’, ‘এবি পজ়িটিভ’-এর মতো গ্রুপের রক্তও নেই। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘পরের ক্যাম্প ৩০ অগস্ট। কী অবস্থা বুঝুন! কত মানুষ রক্তের খোঁজ করছেন। আমরা নিরুপায়। নিজেরা চেষ্টা করে দু’এক দিনের মধ্যে শিবির করতে পারি কিনা, দেখছি।’’ চন্দননগর হাসপাতালের সুপার জগন্নাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘হাসপাতালের কাজ কোনওক্রমে সামাল দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাইরের কেউ এলে ফেরাতে হচ্ছে। না হলে হাসপাতালের চাহিদাও সামাল দেওয়া মুশকিল হবে।’’ একই বক্তব্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের সুপার উজ্জ্বলেন্দুবিকাশ মণ্ডলের। তিনি মনে করেন, শিবিরের সংখ্যা না বাড়লে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। চিকিৎসকদের একাংশের অভিমত, রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তাদের বুঝতে হবে, আগামী দিনেও করোনা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলতে হতে পারে। পরিস্থিতি দ্রুত বদলের সম্ভাবনা নেই। তাই শিবির বন্ধ করলে চলবে না। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে শিবির করতে হবে।
সম্প্রতি কোন্নগরে পর পর দু’টি রক্তদান শিবির বাতিল হয়। তারপরে সেখানে একটি শিবির হয়। উদ্যোক্তাদের অন্যতম অবীন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভাল করে স্যানিটাইজ়িংয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। প্রত্যেক রক্তদাতার জন্য আলাদা বেডশিট ছিল।’’
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা শ্রীরামপুরের একটি সংগঠনের সদস্যেরা জানান, ওই রোগে আক্রান্তদের জন্য রক্তের জোগান দিতে আগামী মঙ্গলবার ওয়ালশে শিবির করা হবে। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকরা সেখানে রক্ত দেবেন। রক্তসঙ্কট মেটাতে এর আগেও ওই সংগঠনের উদ্যোগে এমন শিবির হয়েছে।
(তথ্য সহায়তা গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়)