কারখানা বন্ধের নোটিসের পাশে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের পোস্টার। ছবি: দীপঙ্কর দে।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে দেড় বছর আগে সাময়িক ভাবে বন্ধ (টেম্পোরারি ক্লোজ়ার) হয়ে যায় ডানকুনির বিস্কুট তৈরির কারখানা ‘গ্যাঞ্জেস ভ্যালি ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড’। এ বার তা পাকাপাকি ভাবে বন্ধ (ক্লোজ়ার) করে দেওয়া হল। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। তাঁরা কারখানার গেটের সামনে অনশনের কর্মসূচি নিয়েছেন।
ডানকুনির জগন্নাথপুরে ওই কারখানায় একটি নামী সংস্থার বিস্কুট তৈরি হত। শ্রমিকদের দাবি, কারখানাটি ভালই চলছিল। কর্তৃপক্ষের ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্তের জন্যই সমস্যা তৈরি হয়। উৎপাদন কমিয়ে আনা হয়। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছু শ্রমিক স্বেচ্ছাবসর নেন। অন্যেরা সেই সময় অভিযোগ তোলেন, স্বেচ্ছাবসরের জন্য কর্তৃপক্ষের তরফে জোর করা হচ্ছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগে কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন কর্তৃপক্ষ। পরে আরও কিছু শ্রমিক স্বেচ্ছাবসরের পথে হাঁটেন।
কারখানা সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে আড়াইশোর বেশি শ্রমিক স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। বর্তমানে শ্রমিকের সংখ্যা পঞ্চাশের কম। কারখানা খোলার দাবিতে তাঁরা অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে গত ৪ অগস্ট কর্তৃপক্ষের তরফে নোটিস সেঁটে ‘ক্লোজ়ার’-এর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। নোটিসে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া বিভিন্ন কারণে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে উৎপাদন চালানো সম্ভব হয়নি। কারখানার অর্থনৈতিক ভিত্তিও শেষ হয়ে হয়েছে।
যে শ্রমিকেরা স্বেচ্ছাবসর নেননি, তাঁদের অভিযোগ, কারখানাটি লাভজনক ছিল। কর্তৃপক্ষের একতরফা সিদ্ধান্তে সেটি অচল হয়ে যায়। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অসন্তোষের অভিযোগ তুলে কারখানা বন্ধের পথ প্রশস্ত করা হয়। পরিস্থিতির জন্য শ্রমিক নেতাদেরও দায়ী করছেন তাঁরা। অভিযোগ, শ্রমিক নেতাদের একাংশ চেষ্টা করে গিয়েছেন, যাতে সবাই স্বেচ্ছাবসর নেন।
কারখানা পাকাপাকি ভাবে বন্ধের বিরোধিতা করে ওই শ্রমিকদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত অনৈতিক। সৌরভ দাস নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘বর্তমানে আমরা ৩৭ জন আছি। অবিলম্বে কারখানা খোলার দাবি জানাচ্ছি।’’ শ্রমিকরা জানিয়ে দেন, কারখানা খোলার দাবিতে আজ, শনিবার স্বাধানীতা দিবসে তাঁরা কারখানার গেটের সামনে অনশনে বসবেন। তিন দিন ওই কর্মসূচি চলবে।
শ্রম দফতর সূত্রের দাবি, আলোচনার মাধ্যমে ওই কারখানার সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ উৎপাদন চালুর ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি। ফলে, রাজ্য সরকারের তরফে চেষ্টা করা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এই অবস্থায় কারখানার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিই হয়েছে বলে শ্রমকর্তাদের একাংশ মনে করেন।