স্কুলের পুকুরে এ ভাবেই জাল লাগানো হয়েছে (বাঁ দিকে)। পাখির পায়ে জড়িয়ে যাওয়া ফাঁস কেটে দিচ্ছেন স্থানীয় যুবক। — নিজস্ব চিত্র
পাঠ্যপুস্তকে পরিবেশকে সুস্থ রাখার কথা রয়েছে। পড়ুয়াদের পড়ানো হয় পরিবেশ রক্ষায় পাখপাখালির অবদান। অথচ, স্কুল চত্ত্বরেই পাখির জন্য মরণফাঁদ!
হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের সোনামুই কাদম্বিনী বালিকা বিদ্যালয়ের পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে। পাখির হাত থেকে মাছ বাঁচাতে পুকুরের উপরে নাইলনের জাল পাতা হয়েছে। সেই জালে আটকা পড়ে পাখি আহত হচ্ছে, মারা পড়ছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। পরিবেশকর্মীরাও এ নিয়ে সরব হয়েছেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য কোনও অনুশোচনা নেই। তাঁদের বক্তব্য, আয় বাড়ানোর জন্য পরিচালন সমিতিতে আলোচনা করে ওই জলাশয় এক মৎস্যজীবীকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। আয় হওয়া অর্থ স্কুলের উন্নয়নের কাজে লাগানো হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষিকা বন্দনা পাঁজার দাবি, ‘‘মৎস্যজীবী কী করবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। এতে আমরা কী বলব? অনেক পুকুরেই মাছ রক্ষার জন্য জাল লাগানো আছে। সেগুলো দেখুন।’’
গ্রামবাসীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে ওই জালে একটি মাছরাঙা আটকে পড়ে ছটফট করতে থাকে। ঠান্ডার মধ্যেই জলে নেমে পাখিটিকে উদ্ধার করেন অনির্বাণ সেনাপতি নামে এক স্থানীয় যুবক। তাঁর অভিযোগ, পরে মাছচাষি এলে এ নিয়ে তিনি প্রতিবাদ জানালে হুমকি শুনতে হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়া পরিবেশ মঞ্চের সদস্য এবং বন দফতরের কর্মীরা।
বন দফতরের হাওড়া আরবান বিভাগের রেঞ্জ অফিসার সমীর বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে জাল খুলে নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অনির্বাণের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, ওই পুকুরে বক বা মাছরাঙা মাছ খেতে এসে জালে আটকে পড়ছে। একটি বক মারাও গিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও লাভ হয়নি। পরিবেশ মঞ্চের সম্পাদক শুভদীপ ঘোষের খেদ, ‘‘মানুষ না জেনে পুকুরের উপরে জাল লাগান। আমরা তাঁদের সচেতন করি। কিন্তু স্কুলের চৌহদ্দিতেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চোখের সামনে যদি এই ঘটনা ঘটে, তা হলে কী আর বলার আছে!’’