বিরোধীদের মনোনয়নই জমা হল না আরামবাগে

রবিবার রাত থেকেই গোঘাট, খানাকুল, পুরশুড়া এবং আরামবাগের বিভিন্ন গ্রামে সিপিএম এবং বিজেপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ‘বাইক-বাহিনী’ ভাঙচুর চালায় এবং হুমকি দেওয়া শুরু করে বলে অভিযোগ।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:৫৩
Share:

আরামবাগে সিপিএমের এরিয়া অফিসে ঢুকে মারধর দলের নেতা-কর্মীদের। ছবি: মোহন দাস।

মনোনয়নের শেষ পর্ব যাতে বাধাহীন হয়, তা ‘সুনিশ্চিত’ করতে পুলিশকে তাদের ‘ভূমিকা’ মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। প্রথম পর্বে আরামবাগ মহকুমায় তবু কিছু মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছিলেন বিরোধী প্রার্থীরা। কিন্তু সোমবার, শেষ দিনে মহকুমার কোনও আসনেই বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারলেন না। শাসকদলের বেলাগাম সন্ত্রাস এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকেই এ জন্য দায়ী করেছেন তাঁরা। আরামবাগে সিপিএমের এরিয়া কার্যালয়ে ঢুকেও তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। শাসকদল অবশ্য অভিযোগ নস্যাৎ করেছে।

Advertisement

রবিবার রাত থেকেই গোঘাট, খানাকুল, পুরশুড়া এবং আরামবাগের বিভিন্ন গ্রামে সিপিএম এবং বিজেপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ‘বাইক-বাহিনী’ ভাঙচুর চালায় এবং হুমকি দেওয়া শুরু করে বলে অভিযোগ। আতঙ্ক সঙ্গে করেই বেশ কিছু সিপিএম প্রার্থী সোমবার সকালে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমে আরামবাগে দলের জোনাল কার্যালয়ে জড়ো হন। কিন্তু তাঁদের আর মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়নি। মার খেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে বিজেপি প্রার্থীদেরও।

সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া কমিটির (১) সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাল তৃণমূল। আরামবাগের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন সন্ত্রাস। ডেকেও সময়মতো পুলিশকে পাইনি। সমস্ত বিষয়টা আমরা মহকুমাশাসক এবং নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি।”

Advertisement

সিপিএমের অভিযোগ, সকাল ৯টায় ওই কার্যালয়ে প্রার্থীরা জড়ো হওয়ার পরেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের শাসিয়ে যায়। সিপিএম নেতারা থানায় ফোন করলে পুলিশ আসে। ওই কার্যালয় থেকে মহকুমাশাসকের অফিস হাঁটাপথে মিনিট সাতেক। রাস্তায় তৃণমূলের লোকজন জড়ো হয়েছিল বলে সিপিএমের অভিযোগ। গোঘাট ৪৬ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের সিপিএম প্রার্থী সুপর্ণা সিংহ এবং নেত্রী রাখি রায় তার মধ্যে দিয়েই সাড়ে ১০টা নাগাদ মহকুমাশাসকের অফিসে ঢুকে যান। তারপরেই দু’টি গাড়িতে একদল মহিলা ও যুবক এসে ওই অফিসের সামনে জড়ো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রার্থীর গাড়ি-চালককে ঘিরে শুরু হয় মার। তাঁকে কিছুটা টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। দিয়ে ফোন করিয়ে প্রার্থী এবং তাঁর সঙ্গী নেত্রীকে সেখানে ডেকে আনা হয়। তাঁদেরও পুলিশের সামনে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য ওই প্রার্থী ও সিপিএম নেত্রীকে সোজা দলের জোনাল কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়।

প্রার্থীকে ফিরে আসতে দেখে সিপিএম নেতৃত্ব পুলিশি নিরাপত্তায় মনোনয়ন জমা করতে নিয়ে যাওয়ার দাবি তোলে। তখনই তৃণমূল সমর্থকেরা কার্যালয়ে চড়াও হয়ে দলের নেতা, প্রার্থীদের মারধর, চেয়ার তুলে হামলা করে বলে অভিযোগ। মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। সিপিএম নেতা পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘দুপুরে হামলার সময়ে পুলিশকে ডেকে পাইনি। ওরা আসেনি। হামলার পরে পুলিশ বাহিনী আসে। এসডিপিও, আইসি আসেন। পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক।’’ বিজেপির নেতা তথা রাজ্য কমিটির সদস্য অসিত কুণ্ডুর অভিযোগ, “জেলা পরিষদ প্রার্থী হতে আসা গোঘাটের বেলের তপন রায়-সহ ১২ জনকে মারধর করে বাড়ি পাঠানো হয়। নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে।” খানাকুলের দু’টি ব্লক, পুরশুড়া এবং গোঘাটের দু’টি ব্লকেও পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম এবং বিজেপি।

হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের কর্তারা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেননি। পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনের দাবি, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। গোলমালের খবর পেলেই পুলিশ পৌঁছেছে। মোকাবিলা করেছে। মহকুমাশাসকের অফিস চত্বর এবং সিপিএম দলীয় কার্যালয়ের ঘটনায় লিখিত আভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের দাবি, “সিপিএম গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে নাটক করছে। ওরা নিজেরা মারপিট করে আমাদের দলের ভাবমূর্তি খারাপ করার চেষ্টা করছে।” এ দিন অবশ্য জেলা পরিষদের একটি, গ্রাম পঞ্চায়েতের ন’টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির পাঁচটি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement