আবাস যোজনার উপভোক্তার কাছ থেকে পুরসভার ত্রাণ তহবিলে ১৮ হাজার টাকা নেওয়ার রসিদ। —নিজস্ব
গরিব মানুষদের জন্য সরকারি প্রকল্পে বাড়ি বানিয়ে দিচ্ছে আরামবাগ পুরসভা। সেই কাজ করতে গিয়ে উপভোক্তাদের বরাদ্দ থেকেই পুরসভার ত্রাণ তহবিলের নামে মাথাপিছু ১৮ হাজার টাকা করে কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপভোক্তাদের অনেকেই মনে করছেন, এটা ঘুরপথে ‘কাটমানি’ আদায়!
যে প্রকল্পে পুর এলাকার গরিব মানুষেরা বাড়ি পাচ্ছেন, তার নাম ‘সবার জন্য বাড়ি’। বৃহস্পতিবারই শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লিশ্রীর খন্দকার আনসার আলি কিছু নথি পাঠিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) জানতে চেয়েছেন গরিব উপভোক্তাদের কাছ থেকে এ রকম ত্রাণ তহবিলের নামে টাকা নেওয়ার কোনও আইন আছে কিনা। পুরো বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ এবং আরটিআই করা হয়েছে পুর প্রশাসক স্বপন নন্দীর কাছেও।
পল্লিশ্রীরই অর্চনা অধিকারী তেলেভাজার গুমটি চালান। তিনিও উপভোক্তা। মাসতিনেক আগে তাঁর বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘‘২০১৮ সালে আমার নামে বাড়ি অনুমোদন হয়। তখন থেকেই আমার পাশবই, চেকবই পুরসভা নিয়ে নেয়। এখন পাশবই আনতে গিয়ে দেখি, আমরা নামে বরাদ্দ থেকে ১৮ হাজার টাকা পুরসভার ত্রাণ তহবিলের জন্য কেটে নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত রসিদ পেয়েছি। প্রশ্ন করলে পুর কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা সরকারি নিয়ম মেনেই কাজ করেছেন।”
সরকারি নিয়ম মেনেই ওই কাজ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান প্রশাসক স্বপন নন্দী। তাতে পুরসভার ত্রাণ তহবিলের নামে উপভোক্তাদের বরাদ্দ থেকে টাকা কাটা যায় কিনা, সে প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি স্বপনবাবু। শুধু বলেন, ‘‘বিষয়টা আধিকারিকদের খোঁজ নিতে বলেছি।’’ পুর আধিকারিকদের একাংশের দাবি, প্রকল্পটিতে উপভোক্তার বাড়ি নির্মাণের পর তার নিকাশি, রাস্তা ইত্যাদি পরিকাঠামোর জন্য পুরসভার অবদান ধার্য হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। সেই টাকাটাই পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে না দিয়ে উপভোক্তার টাকা থেকে কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
সরকারি সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীন পুর এলাকায় জন্য ওই প্রকল্পে এক-একটি বাড়ি তৈরিতে বরাদ্দ মোট ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। উপভোক্তার অবদান ২৫ হাজার টাকা। রাজ্যের অবদান ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা এবং কেন্দ্রের ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। বাকি রাস্তা, নিকাশি ইত্যাদি পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার জন্য পুরসভা পৃথক ভাবে ১৮ হাজার টাকা খরচ করবে।