গৃহবন্দি: সপরিবারে মহম্মদ সাগির। নিজস্ব িচত্র
জানলার ধারে দাঁড়িয়ে ছেলেবেলার বন্ধুর সঙ্গে কথা কইছেন বছর চল্লিশের মহম্মদ সাগির আব্দুল মণ্ডল। বেরনোর জো নেই। বাবা বাইরে ঘরে থেকে তালা দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী, দুই নাবালক ছেলেমেয়েও তালাবন্ধ।
সাজা নয়, ‘করোনা ঋতু’তে ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে আসায় ছেলেবৌমা, নাতি-নাতনিকে অক্ষরে অক্ষরে নিভৃতবাস পালন করাতেই এই পন্থা নিয়েছেন সাগিরের বাবা, পান্ডুয়া ব্লকের বেলুন-ধামাসিন পঞ্চায়েতের ডেলোগাছির বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহাব মণ্ডল। রান্নার সরঞ্জাম-সহ প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস কিনে এনে ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন তিনি। ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও একে সচেতনতার নজির বলে মনে করছেন।
সাগির গুজরাতের রাজকোটে গয়নার ব্যবসা করতেন। লকডাউন পরিস্থিতিতে সপরিবারে সেখান থেকে মঙ্গলবার গাঁয়ে ফেরেন। ওই দিন থেকেই তাঁরা বাড়িতে তালাবন্ধ। ওয়াহাব জানান, ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে আসায় ভাইরাস ছড়ানোর ভয় থাকে। তাতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি হতে পারে। সেই পরিস্থিতি কাম্য নয়। তাই এই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেবৌমার সুবিধার জন্য স্ত্রী-ও ওদের সঙ্গে থাকছে। আমি আত্মীয়ের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করছি। সাত দিন এই ব্যবস্থা চলবে। প্রশাসনের লোকেরা সাত দিন নিভৃতবাসে থাকতে বলেছেন।’’
জানলার ও পারে দাঁড়িয়ে সাগির বলেন, ‘‘আমাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। টিভি দেখে সময় কাটছে। ছেলেমেয়েরা ঘরেই খেলাধুলো করছে। বাবা ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। সবাই সুস্থ আছি। তবু, সাবধানের মার নেই। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই বের হব।’’
ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে এসেই বাইরে বেরোলে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কায় অনেক জায়গাতেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে। কেউ দু’কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন। মণ্ডল পরিবারের সচেতনতায় অবশ্য নিন্দুকের মুখে তালা।