আশায়: শুভশ্রী চক্রবর্তী
লিভারের জটিল অসুখে আক্রান্ত হুগলির শ্রীরামপুরের এক স্কুলছাত্রী। চিকিৎসার সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পাড়া-পড়শিরা। চিকিৎসার জন্য টাকা তুলছেন তাঁরা।
শুভশ্রী চক্রবর্তী নামে বছর তেরোর ওই কিশোরী শ্রীরামপুরের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা। স্থানীয় রাজ্যধরপুর নেতাজি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। পরিবারের লোকেরা জানান, গত ১১ নভেম্বর বাড়িতে সে একাধিক বার মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরীক্ষায় লিভারের সমস্যা ধরা পড়ে। ওই রাতেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আট-নয় দিন পরে সেখান থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ছ’-সাত দিন সে ভর্তি ছিল। সেখান থেকে ছাড়ার সময় এক মাসের ওষুধ দেওয়া হয়। এক মাস পরে গ্যাসট্রোএনটেরোলজি এবং হেমাটোলজি বিভাগে দেখাতে বলা হয়। সেই সময় ওই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মেয়েটিকে সুস্থ করে তুলতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তবে এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আসতে কয়েক মাস সময় লাগবে।
এর কয়েক দিন পরে শুভশ্রীর রক্তবমি হয়। ঝিমিয়ে যায় শুভশ্রী। তখন তাকে সোনারপুরে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ সায়েন্স’-এ নিয়ে যাওয়া হয়। এখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন (লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করতে হবে। চিকিৎসার খরচ কয়েক লক্ষ টাকা।
শুভশ্রীর বাবা সুব্রত চক্রবর্তী পুরনো পোশাকের কারবার করেন। যৎসামান্য আয়। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে তাঁরা পঞ্চাশ হাজার টাকা জোগাড় করতে পারেন। এই অবস্থায় মেয়েটির চিকিৎসার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এসেছেন। বাকি টাকা তাঁরাই তুলে দিয়েছেন। পরবর্তী চিকিৎসার জন্যও তাঁরা অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
শুভশ্রীর আত্মীয় অলোক চক্রবর্তী জানান, মেয়েটির স্কুলের তরফে ২০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। অলোক একটি বস্ত্র বিপণীর সেলসম্যান। তাঁর সহকর্মীরাও ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশও সাহায্য করেছেন। অলোক বলেন, ‘‘পাড়ার একটা ছোট্ট মেয়ে সোয়েটার কেনার জন্য পাঁচশো টাকা জমিয়েছিল। মা-বাবাকে বলে টাকাটা আমাদের দিয়ে গিয়েছে। আনাজ বিক্রেতা, ফলবিক্রেতা— যে যেটুকু পেরেছেন দিয়েছেন। ডাক্তার বলেছেন, লাখে এক জনের এই অসুখ হয়। তাও এত কম বয়সে হয় না। ও যদি বাঁচে, সকলের জন্যই বাঁচবে।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের পরিচিতদের কাছে হাত পাতছেন মেয়েটির জন্য। সব টাকা জমা পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দা তাপস দাসের কাছে। তিনিই যাবতীয় হিসেব রাখছেন। তাপসবাবু বলেন, ‘‘টাকার অভাবে মেয়েটার চিকিৎসা হবে না, এটা মানা যায় না।, সবাই মিলে চেষ্টা করছি, শুভশ্রী যেন আর পাঁচটা মেয়ের মতো ফের হেসেখেলে বেড়াতে পারে। পিঠে ব্যাগ নিয়ে ফের স্কুলে যেতে পারে।’’