বি-টেক পাঠরত মেয়েকে নিয়ে রেবা রায়। ছবি: তাপস ঘোষ
স্বামী মারা গিয়েছেন এক যুগ আগে। একাধিক বার প্রশাসনের কাছে আবেদন করা সত্ত্বেও বিধবা ভাতা পাননি ত্রিবেণীর বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের রেবা রায়। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে তাঁর ভরসা বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া টাকা। সেই টাকাতেই মেয়ের উচ্চশিক্ষা চলছে।
স্বামীর মৃত্যুর পরে মহিলারা টাকার অভাবে যাতে বিপাকে না-পড়েন, সে জন্যই বিধবা-ভাতা চালু করে সরকার। রেবাদেবী অবশ্য এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তিনি বলেন, ‘‘স্বামী মারা যান ১৩ বছর আগে। তখন আমার বয়স ৩৭। সেই সময় বলা হয়েছিল, আমার বিধবা ভাতা পাওয়ার বয়স হয়নি। ৬-৭ বছর আগে আবেদন করেছিলাম। তখনও পাইনি। গত বছরের শেষ দিকে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পেও আবেদন করি। তা-ও পাইনি।’’
কেন তিনি ওই ভাতা পাননি, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক (সদর) সৈকত গঙ্গোপাধ্যায়। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, বিধবা ভাতার অঙ্ক মাসে এক হাজার টাকা। চল্লিশোর্ধ্ব মহিলারা ওই ভাতা পেতে পারেন। তবে, এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট সংখ্যক মহিলাই এই ভাতা পান। পরে যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের নাম অপেক্ষারতদের তালিকায় থাকে। ভাতা-প্রাপক কারও মৃত্যু হলে সেই জায়গায় ওই তালিকা থেকে নতুন নাম ঢোকানো হয়। সেই কারণে নতুন কারও পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দেরি হয়ে থাকতে পারে।
রেবাদেবীর স্বামী গণেশ রায় ব্যান্ডেল থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের (বিটিপিএস) ঠিকাকর্মী ছিলেন। স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে তিনি বিটিপিএস-এর আবাসনে থাকতেন। স্বামীর মৃত্যুর পরেও মাসিক ভাড়ায় সেখানেই রয়ে গিয়েছেন রেবাদেবী। তিনি জানান, তাঁর বাবা সরকারি কর্মী ছিলেন। তিনি পেনশন পান। তারই একাংশ রেবাদেবীকে দেন। এ ছাড়া, স্বামীর অবসরকালীন পাওনার মাসিক দেড় হাজার টাকা আসে। তাতেই সংসার চলে।
মেয়ে গার্গী আদিসপ্তগ্রামের একটি বেসরকারি কলেজে বি-টেক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর পড়ার ফি অর্ধেক মকুব করেছেন। খরচের জন্য গৃহশিক্ষক রাখা সম্ভব হয়নি। রেবাদেবী বলেন, ‘‘তবুও মাথা গোঁজার জায়গাটুকু রয়েছে বলে রক্ষা। বিধবা ভাতা পেলে সবটা যে সামলানো যাবে, তা নয়। তবে, কিছুটা সুরাহা তো হবে।’’