ফাঁকা: ভিড় নেই তৃণমূলের মিছিলে। শুক্রবার বিকেলে আরামবাগে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
মিছিলে যোগদানকারীদের অধিকাংশের মুখ ঢাকা মাস্কে। কেউ কেউ মুখও লোকাচ্ছেন। অনেকে জানালেন, তাঁরা বাধ্য হয়ে মিছিলে যোগ দিয়েছেন। কেউ আবার অর্ধেক মিছিল সেরে পিঠটান দিলেন। তারই মধ্যে অনেকে আবার গলা তুললেন তৃণমূলের হয়ে।
ইডি এবং সিবিআই এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থগুলির বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে ও দুর্নীতির সঙ্গে তৃণমূল দলের সম্পর্ক নেই—এই দাবিতে শুক্রবার বিকেলে সারা রাজ্যে পথে নেমেছিলেন তৃণমূলের ছাত্রনেতারা। আর আরামবাগের মিছিলে সামনে এল গা বাঁচানোর এমন ছবিই। হুগলির অন্যত্রও কমবেশি ছবিটা একই। তবে হাওড়ার বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়াদের মিছিল ঘিরে উৎসাহ ছিল। ভিড় জমেছিল ভাল।
হাওড়ায় এ দিন মিছিল হয় উলুবেড়িয়া কলেজ, বাগনান কলেজ, উদয়নারায়ণপুর মাধবীলতা মহাবিদ্যালয়, জয়পুর পঞ্চানন রায় কলেজ, আমতা রামসদয় কলেজ, পুরাস কানপুর হরিদাস নন্দী কলেজ এবং জগতবল্লভপুর শোভারাণী কলেজের সামনের রাস্তায়। শ্যামপুরে মিছিল হবে আজ, শনিবার। প্রতিটি মিছিলেই বেশ ভিড় হয়। কলেজ ইউনিট ছাড়াও ব্লক স্তরের সাংগঠনিক নেতারাও মিছিলে সামিল হন। এ দিনের মিছিল ঘিরে কোথাও গোলমাল হয়নি বলে গ্রামীণ জেলা পুলিশ সূত্রে খবর।
মিছিলের পক্ষে খানাকুলের রাজা রামমোহন রায় মহাবিদ্যালয়ের কলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা মধুসদূন মণ্ডল বলেন, “ইডি, সিবিআই তো খালি তৃণমূলের লোকদেরই ধরছে। বিজেপিতে চলে গেলে সে সাধু। চোরদের ধরা হলে সব চোরদেরই ধরা হোক।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীপুরের এক ছাত্র অবশ্য বলেন, “দলের নির্দেশ এবং নেতাদের উপস্থিতির কারণেই মিছিলে হাঁটতে হয়েছে। শুধু আমাদের চোর কেন ধরছো—-বিষয়টা নিয়ে মিছিল যে মানুষ ভাল ভাবে নেবেন না তা বুঝেই অনেকে অর্ধেক মিছিলসেরে পালিয়েছেন।”
প্রস্তুতি সভা এবং মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। ভাল মিছিল কেন হল না প্রশ্নে তৃণাঙ্কুরবাবুর জবাব, ‘‘আরামবাগের পর পান্ডুয়ায় প্রস্তুতি বৈঠক এবং মিছিল কর্মসূচি থাকায় মিছিলের সময় ছিল না বেশি। প্রায় ৫০০ মিটারের মতো মিছিল হয়েছে। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’’
তবে তৃণমূলের এই মিছিল নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। উলুবেড়িয়ার সিপিএম নেতা সাবিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত। দলের চোর নেতাদের সমর্থনে তারা যে মিছিল করবে তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে!’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপি সভাপতি অরুণ উদয় পালচৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এর আগে চোরদের বাঁচানোর জন্য ধর্নায় বসে ছিলেন। এখন চোরদের বাঁচানোর জন্য ছাত্র সমাজকে দিয়ে মিছিল করাচ্ছে তৃণমূল। দুঃখজনক বিষয়।’’
হুগলির সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইডি-সিবিআই যা করছে, সবই আদালতে নির্দেশে। আর তৃণমূল যা করছে তা অপরাধীদের পক্ষে। সেটা অন্যায়।” বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ হেসে বলেন, “চুরিতে তৃণমূলের রথী-মহারথীরা ধরা পড়ছেন। মিছিল করে কোনও ফল মিলবে না।’’