বৈদ্যবাটী গোবিন্দনগর চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপ্রতিমায় সরস্বতীর পরিবর্তে পুজিত হয় কুলদেবতা গোবিন্দ মূর্তি। —নিজস্ব চিত্র।
গোবিন্দনগরের দুর্গাপুজো আসলে ২২ টি পরিবারের আয়োজিত এক পারিবারিক পুজো। এই পুজোর পথচলা শুরু ১৯৪৯ সালে। এই পুজো ঘিরে বর্তমানে শুধু ২২ টি পরিবার নয়, এলাকার অন্য বাসিন্দারাও যোগ দেন। এই পুজোর প্রতিমার বৈশিষ্ট্য দুর্গার সঙ্গে থাকা সরস্বতীর পরিবর্তে সেখানে থাকে গোবিন্দমূর্তি।
এই প্রতিমার বৈশিষ্ট্যের এক ইতিহাস আছে। ১০২০ বঙ্গাব্দে যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে, তাঁর গৃহে গোবিন্দ বিগ্রহ পাঠিয়ে দেন পরমভক্ত শিবরাম সার্বভৌমের কাছে। সেই গোবিন্দের আগমনে শিবরাম দুর্গাপূজোর সময় কুলদেবতা গোবিন্দের প্রতি ভক্তিতেই দেবী দুর্গার সঙ্গে থাকা সরস্বতী মূর্তির পরিবর্তে গোবিন্দ মূর্তি বসিয়ে পুজো শুরু করেন। দুর্গা প্রতিমার সাথে এই গোবিন্দমূর্তি সংযোজন নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী।
আজ থেকে প্রায় ৪১০ বছর আগে অভিভক্ত ভারতের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার কোটালিপাড়ার মদনপাড়া গ্রামের চৌধুরী বংশের পঞ্চদশ পূর্বপুরুষ পণ্ডিত শিবরাম সার্বভৌমের আমল থেকেই এই পুজো চলে আসছে। স্বাধীনতার পরই তাঁর বংশধরেরা বৈদ্যবাটীর গোবিন্দনগরে চলে আসেন। তারপর থেকেই এখানে এই পুজোর প্রচলন।
আগে এই প্রতিমা ঠাকুরদালানে তৈরি হত। প্রতিমা তৈরি শিল্পী না পাওয়ায় বর্তমানে পঞ্চুমিতে কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর আসে। আগে পুজোয় পাঁঠা বলি হত। বলি দিতেন চৌধুরী বংশের পুরুষেরাই। বর্তমানে পাঁঠা বলি বন্ধ হয়েছে।
স্থায়ী দুর্গা মণ্ডপে প্রতিমা পূজিত হয়। প্রায় সব পরিবারের তরফ থেকেই পুজোর ভোগ নিবেদিত হয়। নবমীর রাতে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। দশমীতে সিঁদুর খেলার পর হয় প্রতিমা নিরঞ্জন।