সিপিএম প্রার্থী বিজয়ানন্দ হাজরা (বাঁ দিকে)। বিজেপি প্রার্থী আনন্দ হাজরা (ডান দিকে)। সম্পর্কে তাঁরা ভাই-ভাই। —নিজস্ব চিত্র।
দাদা সিপিএম প্রার্থী। ভাই বিজেপির। হুগলির পাণ্ডুয়ায় পঞ্চায়েত প্রার্থী হলেন একই পরিবারের দুই সদস্য। দাদা কিছু ক্ষণ আগে যে বাড়িতে প্রচার সেরে গিয়েছেন, ভাই তার কিছু ক্ষণের মধ্যে ওই বাড়িতে গিয়ে ভোটভিক্ষা করছেন। দুই ভাইয়ের লড়াই জমে উঠেছে পাণ্ডুয়ার ক্ষীরকুণ্ডি নিয়ালা নমাজ গ্রাম পঞ্চায়েতে।
ক্ষীরকুণ্ডির বাসিন্দা পঞ্চানন হাজরা আজীবন বামপন্থী। হুগলির পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির তিন বারের সদস্য ছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধ। তাঁর দুই ছেলেই এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। বড়ছেলে বিজয়ানন্দ হাজরা বাবার মতোই সিপিএমের সমর্থক। বাবাকে অনুসরণ করে সিপিএমের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন। আর তাঁর ভাই আনন্দ হাজরা ওই পঞ্চায়েতেরই বিজেপি প্রার্থী। বড়ছেলে বলছেন, বাবা বাম আদর্শে আজীবন বিশ্বাস করেছেন, তিনিও তাই। অন্য দিকে, ছোট ছেলে বলছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভক্ত। প্রধানমন্ত্রীকে আদর্শ করে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন। বাবাকে তিনি বোঝাবেন, এ বারের ভোট যেন তিনি বিজেপিকে দেন।
দুই ভাই জানাচ্ছেন,তাঁদের ভাতের হাঁড়ি আলাদা হলেও মনের মিল আছে। ভোটে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছেন বটে। তবে সেটা তো মতাদর্শের লড়াই। রাজনীতির আঁচ ব্যক্তিগত সম্পর্কে পড়তে দেবেন না। সিপিএম প্রার্থী বিজয়ানন্দের কথায়, ‘‘১০০ দিনের কাজ বন্ধ, আবাসের ঘর পাচ্ছেন না প্রকৃত উপভোক্তারা, পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে এলাকায়। গ্রামের মানুষের হাজারও অসুবিধা রয়েছে। সেগুলো দূর করতে চান। অন্য দিকে, সিপিএম প্রার্থীর ভাই বিজেপি প্রার্থী আনন্দ বলেন, ‘‘মোদীজির ভক্ত আমি। বাংলায় দুর্নীতি চলছে। আমি এর প্রতিবাদে বিজেপি প্রার্থী হয়েছি।’’ তবে দুই ভাইয়ের একটি প্রতিশ্রুতি সমান। দু’জনেই বলছেন দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়বেন।
দুই প্রার্থী একে অন্যকে নিয়ে কী বলছেন? বিজয়ানন্দের কথায়, ‘‘ভাই বিজেপির প্রার্থী হয়েছে। তাতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে। বাবার কাছে রাজনীতি শিখেছি। আমি বামপন্থায় বিশ্বাসী। তাই সিপিএমের প্রার্থী হয়েছি। মানুষকে বলছি, দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়তে আমাকে ভোট দিন।’’ অন্য দিকে, আনন্দ বলেন, ‘‘আমি বিজেপির প্রার্থী হব, এটা বাড়িতে বলতে গিয়ে প্রথমে অসুবিধায় পরেছিলাম। বাবা সারাজীবন ধরে সিপিএম করেন। পরে বাবাকে বুঝিয়েছি। কিন্তু পরিবার আলাদা বিষয়। রাজনীতি আলাদা জায়গায়। বাবাকে বোঝাব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমি বিজেপির পক্ষ নিয়েছি।’’